শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

দশ বছর পর আবারও হজ ফ্লাইট চালু করল ইরান ও সৌদি আরব, বরফ গলছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে

প্রায় এক দশক বন্ধ থাকার পর অবশেষে ইরান থেকে সরাসরি হজ ফ্লাইট চালু করেছে সৌদি আরব। শনিবার তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইনাসের প্রথম হজ ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সৌদি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

এই ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটলো। ২০১৬ সালে সৌদি আরবে শিয়া নেতা শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং এর জেরে তেহরান ও মাশহাদের সৌদি কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে যায়। ওই বছরের পর থেকে ইরানি নাগরিকদের সরাসরি হজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হলে সম্পর্কোন্নয়নের ধারা শুরু হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এবারের হজ ফ্লাইট চালু সেই পুনর্মিলনেরই সর্বশেষ উদাহরণ।

সৌদি আরবভিত্তিক সাশ্রয়ী উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইনাস আপাতত শুধু হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ফ্লাইট চালু করেছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইট এখনও বন্ধ রয়েছে। তবে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, তেহরানের পাশাপাশি মাশহাদ থেকেও ফ্লাইট চালু করা হবে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার ইরানি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছাতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বর মাসে গাজার যুদ্ধ ইস্যুতে আয়োজিত আরব-ইসলামিক সম্মেলনে যোগ দিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সৌদি আরব সফর করেন। এটি ছিল দুই দশকের মধ্যে কোনো ইরানি প্রেসিডেন্টের প্রথম সৌদি সফর।

এরপর ডিসেম্বর মাসে ইরান এয়ার মাশহাদ থেকে সৌদির দাম্মামে ফ্লাইট চালু করে এবং চলতি বছরের শুরুতে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ খালিদ বিন সালমান ইরান সফরে গিয়ে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই সম্পর্কোন্নয়নের ঘটনাগুলো সামনে আসছে এমন সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে একাধিক দফা বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক সফরে ইঙ্গিত দেন, চুক্তি কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তবে দ্রুত চুক্তিতে সম্মতি না দিলে ‘খারাপ কিছু’ ঘটতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সব মিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের দুটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র ইরান ও সৌদি আরবের মাঝে বহু বছর পরে পুনরায় হজযাত্রী পরিবহন চালুর বিষয়টি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন