বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

কুরবানির হাটে দাওয়াত: বেপারীদের ঈমানী জাগরণে আমাদের দায়িত্ব

ইসলামী জীবন | দৈনিক প্রান্তকাল

তাবলীগ জামাতের দাওয়াতি কাজ মূলত প্রতিদিনের নিয়মিত আমলের মধ্য দিয়েই চলে। তবে সময় ও প্রেক্ষাপটভেদে কিছু মৌসুমভিত্তিক বিশেষ মেহনতও হয়ে থাকে, যার ফায়দা অনেক গভীর ও ব্যাপক। এর মধ্যে অন্যতম হলো—হাজীদের ওপর মেহনত, পরীক্ষার সময় ছাত্রদের ওপর মেহনত এবং কুরবানির সময় বেপারীদের ওপর মেহনত।

এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো কুরবানির সময় বেপারীদের ওপর বিশেষ দাওয়াতি মেহনতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।

হাটে থাকা, কিন্তু নামাজ না পড়া-

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ বেপারী কুরবানির গরু নিয়ে রাজধানীসহ বড় বড় শহরের হাটে চলে আসেন। প্রায় ৭–১০ দিন হাটেই থাকেন। সেখানে তাদের রাতযাপন, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা—সবই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে হাটে। কিন্তু এই সময়টাতেই তারা গাফেল হয়ে পড়েন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত—নামাজ থেকে। একেকজন বেপারী এই কয়দিনে ৩৫ থেকে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ মিস করেন। অথচ এই নামাজই তার জীবনের মূল সফলতার চাবিকাঠি।

আমরা যারা হাটে গরু কিনতে যাই, তারা কি একবারও ভাবি—যার কাছ থেকে গরু কিনছি, সে হয়তো আল্লাহর প্রতি দায়িত্বশীল নয়? নামাজহীন এই অবস্থাটা তার জন্য কত বড় ক্ষতির, সেটা কি আমরা অনুভব করি? আমরা কেবল দুনিয়ার জন্য তার পণ্য কিনতে গেলাম, কিন্তু আখিরাতের জন্য একটিবারও তাকে ডাকলাম না!

একটি সহজ কর্মপন্থা

যারা তাবলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কিংবা দ্বীনদার ভাই, তারা চাইলেই এই সময়টাতে গরুর হাটকে একটি দাওয়াতি ময়দানে পরিণত করতে পারেন। হাটে গিয়ে বেপারীদের বলেন,

– “আপনারা কয়েকজন মিলে এসেছেন, তাই না? তাহলে এভাবে করেন—দুজন গরুর পাশে থাকেন, বাকিরা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আসেন। তারপর তারা এসে দাঁড়াক, আপনারা গিয়ে জামাআতে নামাজ পড়েন।”

তাদেরকে নামাজের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়, বলা যায়:

– “ভাই, আপনি যদি একটাও গরু বিক্রি না করতে পারেন, হয়তো ৫০ হাজার বা এক লাখ টাকা ক্ষতি হবে। কিন্তু এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে তার চেয়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল, যার হিসাব শুধু আখিরাতে মিলবে।”

তাদের পাক-পবিত্রতা বজায় রাখার উপায়ও সহজ করে বলা যায়—

– “একটা লুঙ্গি, একটা পাঞ্জাবি কম দামে কিনে রাখেন। নামাজের সময় ওগুলো পরে অজু করে জামাআতে শরিক হয়ে যান।”

আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ২/৩ জন মিলে হাদিয়া হিসেবে কিছু বেপারী ভাইকে লুঙ্গি-পাঞ্জাবিও দেওয়া যেতে পারে। গত বছর এমন উদ্যোগে এক সাথী ভাই ২০ জন বেপারীকে নামাজে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন।

একটি হৃদয় স্পর্শী চিত্র কল্পনা করুন

হাজারো মানুষ নামাজ না পড়ে বসে আছে, জুমার সময়ও কেউ উঠছে না। আর আপনি, একজন নামাজি ব্যক্তি, তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন—একবারও কি মন বলছে না, তাদের ডেকে নিয়ে যাই? তাদের হাত ধরে বলি, “ভাই, নামাজটা পড়ে আসেন”?

এই আহ্বান আমাদের সকলের জন্য। হাটে গিয়ে গরু কেনার পাশাপাশি যদি একজন ভাইকে নামাজের পথে আনতে পারেন, তবে সেটাই হবে আপনার কুরবানির সেরা আমল।

আসুন, কুরবানির হাটেও ঈমানের আলো ছড়িয়ে দিই। হোক তা আমাদের কথায়, আচরণে, আর আন্তরিক দাওয়াতে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন