শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ড্রোন, পোস্টার ও বিদেশি প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা—ইসির নতুন আচরণবিধি জারি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি, ২০২৫’ গেজেট আকারে জারি করেছে। এতে প্রথমবারের মতো ভোটের প্রচারে ড্রোন, পোস্টার ও বিদেশি প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিলবোর্ড, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার, এআই–এর অপব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব প্রচারণার বিষয়েও কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, নতুন আচরণবিধি ২০০৮ সালের বিধিমালা ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে নির্বাচনি প্রভাব প্রতিরোধ, তথ্যভিত্তিক স্বচ্ছতা ও পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা দল ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে না; প্রতিটির দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৬ ফুট এবং প্রস্থ ৯ ফুটের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। পোস্টার, ব্যানার বা লিফলেটে পলিথিন, রেক্সিন বা পিভিসি ব্যবহার করা যাবে না। প্রচারণায় বিদ্যুৎচালিত আলোকসজ্জা ও শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেল এর বেশি রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ড্রোন ও কোয়াডকপ্টার ব্যবহারেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন বা প্রচারের সময় কোনো প্রার্থী, দল বা গণমাধ্যমই এ ধরনের যন্ত্র উড়াতে পারবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইউটিউবসহ ব্যবহৃত সব আইডি ও ই-মেইল তথ্য আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনি প্রচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এআই দিয়ে ভুয়া তথ্য, কারও চেহারা বিকৃতকরণ, ঘৃণাত্মক বক্তব্য বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার করলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট দল বা প্রার্থীও একই অঙ্কের অর্থদণ্ডের মুখোমুখি হবে।

এছাড়া, নির্বাচনে ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার, প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে উসকানিমূলক ভাষা, নারী বা সংখ্যালঘুদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য এবং বিদেশে সভা–সমাবেশ বা প্রচারণা আয়োজন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রার্থীদের এখন থেকে ইশতেহার ঘোষণায় একমঞ্চে অংশগ্রহণ ও আচরণবিধি মানার অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট আসনের সব প্রার্থীকে নিয়ে একই দিনে ইশতেহার পাঠ ও আলোচনার আয়োজন করবেন।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘনকে এখন থেকে ‘গুরুতর নির্বাচনি অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রয়োজন হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকবে।

প্রথমবারের মতো আইটি-সমর্থিত পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালুর ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় দেশের ভেতরের বিশেষ শ্রেণির ভোটার ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।

ইসির এক সদস্য বলেন, “আরপিও সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন ও পর্যবেক্ষণ নীতিমালাসহ সব সংস্কারের পর আচরণবিধি জারির মাধ্যমে নির্বাচনি আইন সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। এই বিধিমালা আসন্ন নির্বাচনে একটি স্বচ্ছ, পরিবেশবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক প্রচারণা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় বড় পদক্ষেপ।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন