শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ঢাকা–৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা: স্থানীয় নেতাদের ক্ষোভ, কর্মীদের হতাশা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দেশের ২৬৭টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকা–৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় পুরান ঢাকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।

লালবাগ, চকবাজার, বংশাল ও কামরাঙ্গীরচরের অংশ নিয়ে গঠিত এই আসনে ঐতিহ্যগতভাবে স্থানীয় প্রার্থীরাই প্রাধান্য পেয়েছেন। কিন্তু এবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে (গত সোমবার, গুলশান কার্যালয়) নাম ঘোষণার তালিকায় ঢাকা–৭ বাদ পড়ায় দলীয় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

পুরান ঢাকায় ক্ষোভ ও হতাশা

বুধবার ও বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে—মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কার্যালয়গুলোতে কর্মীদের হতাশা ও আলোচনা–সমালোচনায় সরব পরিবেশ। চকবাজার, বংশাল ও আজিমপুরে টাঙানো ব্যানার-পোস্টারে প্রার্থীদের প্রচার চালালেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় সবাই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, “পুরান ঢাকার ভোটাররা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থীকে সহজে মেনে নিতে পারেন না।”

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এখানকার মানুষ স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। বহিরাগত প্রার্থী এলে তারা এলাকার ভোটারদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে না।”

মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫ মুখ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা–৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন—

১️⃣ মীর নেওয়াজ আলী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি।

২️⃣ ইসহাক সরকার, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

৩️⃣ হাজী মনির হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কামরাঙ্গীরচর বিএনপির সাবেক সভাপতি।

৪️⃣ হামিদুর রহমান হামিদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য।

৫️⃣ নাসিমা আক্তার কল্পনা, প্রয়াত এমপি নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী।

‘আমার ব্যর্থতা আমি চাঁদাবাজ নই’ — মীর নেওয়াজ আলী

নিজ বাসভবনের পাশে কার্যালয়ে সমর্থকদের ভিড়ের মাঝে মীর নেওয়াজ আলী বলেন,

“আমার ব্যর্থতা একটাই—আমি চাঁদাবাজি বা লুটপাট করতে পারি না।

দল যাকে মনোনয়ন দিক, আমি তার পক্ষে কাজ করব; দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।”

তবে তিনি দাবি করেন, “১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত।”

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. বাদল বলেন, “নেওয়াজ আলী সৎ ও বিনয়ী রাজনীতিবিদ। তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই—এমন মানুষই এখন প্রয়োজন।”

ইসহাক সরকারের শিবিরে অপেক্ষা আর ক্ষোভ

বংশালের চৌরাস্তায় ইসহাক সরকারের অফিসের সামনে শত শত নেতা–কর্মী জড়ো হয়ে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ছাত্রদলের সাবেক সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউদ্দিন রাজীব বলেন,

“ইসহাক সরকার শতাধিক মামলার মধ্যে থেকেও দলের রাজনীতিতে ছিলেন।

তাকে বঞ্চিত করা হলে পুরান ঢাকার কর্মীরা মেনে নেবে না।”

নিজের অবস্থান নিয়ে ইসহাক সরকার বলেন,

“ঢাকার স্থানীয়দের ঐতিহ্য আছে। পুরান ঢাকায় বাইরের প্রার্থী দিলে জনগণ তা গ্রহণ করবে না।”

নারী নেতৃত্বের পক্ষে সমর্থন

বিএনপির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা বদিউল আলম সুইট বলেন,

“পিন্টু ভাইয়ের স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা আপা যোগ্য প্রার্থী।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংগঠনের সঙ্গে আছেন। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে পুরান ঢাকায় নতুন উদ্দীপনা তৈরি হবে।”

নাসিমা আক্তার কল্পনা বলেন,

“আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

তবে দল যাকেই মনোনয়ন দিক, আমি তার পক্ষে কাজ করব।”

‘বাইরের প্রার্থী নয়’ — স্থানীয়দের স্পষ্ট বার্তা

বংশালের সাবেক কমিশনার ও বিএনপির সিনিয়র নেতা সাহিদা মোর্শেদ বলেন,

“পুরান ঢাকা ঐতিহ্যের এলাকা। এখানে স্থানীয় প্রার্থী ছাড়া কেউ টিকবে না।

আগেরবার বহিরাগত প্রার্থী মোস্তফা মহসিন মন্টুকে দেওয়া হয়েছিল,

তিনি একদিনও প্রচারে আসেননি—ফলাফলও ভালো হয়নি।”

তিনি যোগ করেন, “এলাকার ভোটাররা সংবেদনশীল। তাদের পছন্দকে উপেক্ষা করলে ফল উল্টো হবে।”

দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“ঢাকা–৭ আসনটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। স্থানীয় প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সঠিক সময়েই জানানো হবে।”

তারা আরও বলেন, “বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়—দল সে দিকটিও বিবেচনায় রাখছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পুরান ঢাকার এই আসনটি শুধু ভোটের ক্ষেত্র নয়, এটি ঐতিহ্যের প্রতীক।

তাই এখানে প্রার্থী নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্ত শুধু দলের নয়—পুরান ঢাকার জনগণের মন জয় করতেও বড় পরীক্ষায় ফেলবে দলটিকে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন