শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুললেন মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।”

আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ‘জুলাই জাতীয় সনদ ও তার বাস্তবায়নের সুপারিশ’।

‘বিশ্বাসঘাতকতা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ তৈরি করেছিল, তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পর দেখা যায়, নোট অব ডিসেন্টগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিশন সদস্যদের প্রতি রাখা আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতি এই আচরণ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, যা কেউ আশা করেনি।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি সংস্কারের পক্ষে দল। মতভেদ থাকলেও আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছি। যেখানে মতভেদ ছিল, সেখানে আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছি। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে আমরা তা বাস্তবায়ন করব—এটাই গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার।”

‘গণভোট নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে’

আগামী নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনে একটি মহল সক্রিয় বলে দাবি করে ফখরুল বলেন, “গণভোট নির্বাচনের আগে করা সম্ভব নয়। নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে—এটি স্পষ্ট করা হয়েছে। ভোটে দুটি ব্যালট থাকবে—একটি সংসদ নির্বাচনের, অন্যটি গণভোটের জন্য।”

তিনি আরও বলেন, “যারা গণভোটের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে, তারা যেন জনগণকে বিভ্রান্ত না করে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি দল আবারও গণতন্ত্রের নামে ষড়যন্ত্র করছে, জনগণ যেন সেটি না ভোলে।”

‘জাতীয় সরকার গঠনের অঙ্গীকার’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আ স ম আব্দুর রবের মতো নেতারা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করেছিলেন। আমরা তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”

তিনি জানান, আগামীতে নির্বাচিত হলে বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে।

অন্য নেতাদের মতামত

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এই অবস্থায় গণভোট নয়, দ্রুত নির্বাচনই একমাত্র সমাধান।”

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “আমরা বারবার স্বৈরাচারকে সরাই, আবার নিজেদের ভেতর থেকেই স্বৈরাচার জন্ম দিই। চব্বিশ-পরবর্তী রাজনীতি নতুন সূচনা না করে বিএনপি-জামায়াতের দ্বিদলীয় ঘেরাটোপে আবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।”

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “গণভোটকে সংসদের আসন নির্ধারণের হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। ডিসেম্বরের তফসিলের আগে আরেকটি নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা নির্দিষ্ট বিষয়ে সমর্থন দিয়েছি, নির্বাহী আদেশ দেওয়ার জন্য নয়।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, যিনি বলেন, “জেএসডি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য, আজও আমরা সেই অবস্থানেই আছি।”

সভায় আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন