শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পিয়ন ‘পানি জাহাঙ্গীর’-এর বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচার মামলা দায়ের করেছে সিআইডি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের প্রাক্তন পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অর্থপাচারের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলা নং–১১, তারিখ–৩১/১০/২০২৫ খ্রি. দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪(২)(৪) ধারায় দায়ের করা হয়।

অভিযুক্তের পরিচয় ও আর্থিক কর্মকাণ্ড

অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম প্রথমে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার গঠনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, এবং এই সময়েই তিনি আর্থিকভাবে অস্বাভাবিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন।

২০১০ সালে তিনি ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন এবং বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসার আড়ালে বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক ব্যাংকিং লেনদেন শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের টাকা জমা হলেও তার বৈধ উৎস বা ব্যবসায়িক সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি।

অর্থপাচারের প্রমাণ ও বিদেশে পলায়ন

সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ৫৬৫ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে, যার অধিকাংশই নগদ জমা, এবং অর্থের উৎস অজানা।

জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

২০২৪ সালের জুন মাসে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন।

সরকারি অনুমোদন ছাড়া তারা বিদেশে সম্পদ বিনিয়োগ করেছেন বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

সিআইডির তদন্ত অগ্রগতি

প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী, ভাই এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বর্তমানে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করছে।

অবৈধ অর্থ লেনদেনের সম্পূর্ণ চক্র, বিদেশে পাচারকৃত অর্থের অবস্থান ও সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের শনাক্ত এবং গ্রেফতারের লক্ষ্যে তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন