শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে — প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের আশ্বাস জামায়াত ও এনসিপিকে

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক প্রস্তুতি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পৃথকভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উভয় দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন,

“একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যে কোনো পরিবর্তন বা রদবদল আমি নিজে সরাসরি তদারকি করব।”

তিনি আরও যোগ করেন,

“আমরা চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচন হোক উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ।”

এনসিপির সঙ্গে বৈঠক

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সারজিস আলম, সামন্তা শারমিন, ও খালেদ সাইফুল্লাহ।

বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বলেন—

“নির্বাচনের আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের রোডম্যাপ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা জাতি দেখতে চায়। এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

প্রধান উপদেষ্টা জবাবে এনসিপিকে আশ্বস্ত করে বলেন,

“জুলাই সনদ জাতির জন্য একটি ঐক্যের দলিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে এবং আপনাদের মতামত সেখানে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হবে।”

তিনি এনসিপিকে জুলাই সনদে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান এবং বলেন,

“এই সনদে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ জাতির জন্য এক নতুন ঐতিহাসিক অধ্যায় তৈরি করবে।”

জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক

এরপর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে দলটির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এ.টি.এম. মা’ছুম ও রফিকুল ইসলাম খান এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াত নেতারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

সৈয়দ তাহের বলেন,

“জুলাই সনদে এমন কিছু মৌলিক বিষয় আছে যা সরাসরি নির্বাচনের কাঠামোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণের মতামত যাচাইয়ের জন্য গণভোট হওয়া জরুরি।”

তিনি আরও বলেন,

“একই দিনে গণভোট ও নির্বাচন হলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”

প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন,

“গণভোট ও নির্বাচন—দুই প্রক্রিয়াই গণতন্ত্রের অংশ। আমরা চাই, জনগণের মতামতই হোক সব সিদ্ধান্তের ভিত্তি।”

জামায়াতের নেতারা নির্বাচনী প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন।

সরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতি

বৈঠকে সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন