শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনা – দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন, এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তার মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে টেলিগ্রাফ জানায়, ওই দমন অভিযানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন, যা সাম্প্রতিক দক্ষিণ এশীয় ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতার একটি ঘটনা।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ময়নুল করিম আদালতে বলেন, “আমাদের হাতে অডিও-ভিডিও প্রমাণ, ফোন রেকর্ড ও প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য রয়েছে, যা স্পষ্ট করে যে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাই তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুদণ্ড।” একই সঙ্গে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, “তিনি ১,৪০০ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।”

অভিযোগ ও পটভূমি

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দমন অভিযানে নিহতদের মরদেহ পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং আহতদের চিকিৎসা বঞ্চিত করার নির্দেশও দেন। যদিও শেখ হাসিনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুতই শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট তিনি হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন, এবং বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে হামলা চালায়। সেদিন ঢাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী দিন হিসেবে বিবেচিত।

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল বিক্ষোভ দমনে।

সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও অন্যান্য মামলা

রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে প্রস্তাব করেছে, শেখ হাসিনার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হোক। তিনি বর্তমানে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত, পাশাপাশি একাধিক দুর্নীতি মামলার আসামি।

শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন, “নিরাপত্তা বাহিনী তখন আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক এই বিচারকে “একটি সাজানো প্রহসন” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি নিজেও এক মামলায় অভিযুক্ত, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে—তিনি তার খালার প্রভাব খাটিয়ে পরিবারের পক্ষে ভূমি বরাদ্দ নিয়েছেন।

আদালতে শেখ হাসিনার পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন রোববার থেকে শুরু হয়ে আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা, এবং চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ।

এদিকে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, ফলে বিএনপি এখন নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন