শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ওটস্ মিল—প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর সংযোজন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওটস মিল বা ওটমিল আমাদের খাদ্যাভ্যাসে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষজন ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ওটস যুক্ত করছেন। কিন্তু আসলে ওটস কী, কেন এটি খাওয়া প্রয়োজন, কতটা খাওয়া উচিত এবং কারা উপকৃত হন—এসব বিষয় নিয়ে আজকের প্রান্তকাল স্বাস্থ্য প্রতিবেদন।

ওটস কী

ওটস হলো এক ধরনের সম্পূর্ণ শস্য যা ‘Avena sativa’ উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এটি জটিল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামে সমৃদ্ধ। এতে থাকা বেটা-গ্লুকান নামের দ্রবণীয় আঁশ রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ওটস মিল খাওয়ার উপকারিতা

ওটস রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে এবং ধমনী পরিষ্কার রাখে, ফলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে। আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি সহজে হজম হয় না, তাই দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ও শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে না। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ওটস একটি উপকারী খাদ্য। কারণ এর কার্বোহাইড্রেট ধীরে শোষিত হয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যায় না। এছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। ওটসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষকে মুক্ত মৌলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ওটস খেলে ত্বক মসৃণ থাকে, প্রদাহ কমে, আর চুলের গঠনও মজবুত হয়।

কিভাবে ওটস খাওয়া যায়

ওটস খাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো দুধ বা পানিতে সেদ্ধ করে ওটস পোরিজ তৈরি করা। সকালে নাশতায় এটি খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। এর সঙ্গে ফল, বাদাম, মধু বা দারচিনি মিশিয়ে স্বাদ ও পুষ্টি বাড়ানো যায়। ওটস সালাদ বা সবজি স্যুপেও ব্যবহার করা যায়। অনেকেই ওটস, কলা ও ডিম মিশিয়ে প্যানকেক তৈরি করেন—এটি শিশু ও বয়স্ক উভয়ের জন্যই পুষ্টিকর ও শক্তিদায়ক।

কতটা ও কখন খাওয়া উচিত

সাধারণভাবে দিনে অর্ধ কাপ বা প্রায় পঞ্চাশ গ্রাম কাঁচা ওটস যথেষ্ট। সকালে খেলে সারাদিনের শক্তি পাওয়া যায় এবং পেটও ভরা থাকে। ওজন কমাতে চাইলে রাতে হালকা খাবার হিসেবে ওটস খাওয়া যেতে পারে, তবে দুধ বা চিনি ছাড়া খাওয়াই ভালো।

কারা খাবেন, কারা সাবধান থাকবেন

সব বয়সের মানুষই ওটস খেতে পারেন—শিশু, গর্ভবতী নারী, কর্মজীবী, এমনকি বয়স্ক ব্যক্তিরাও। এটি হৃদ্‌রোগী ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার। তবে যাদের গ্লুটেন অ্যালার্জি আছে, তাদের জন্য গ্লুটেনমুক্ত (Gluten-free) ওটস বেছে নেওয়া জরুরি, কারণ প্রক্রিয়াজাত করার সময় কিছু ওটস গ্লুটেনের সংস্পর্শে আসতে পারে।

কোন ধরনের ওটস উপযুক্ত

রোল্ড ওটস (Rolled Oats) সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজপাচ্য। স্টিল-কাট ওটস (Steel-cut Oats) কম প্রক্রিয়াজাত এবং আঁশ বেশি, ফলে এটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপযুক্ত। ইনস্ট্যান্ট ওটস দ্রুত রান্না হয়, তবে এতে পুষ্টিগুণ কিছুটা কম থাকে। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য রোল্ড বা স্টিল-কাট ওটস বেছে নেওয়াই শ্রেয়।

উপসংহার

ওটস মিল প্রকৃত অর্থেই একটি ‘সুপারফুড’। নিয়মিত খেলে এটি হৃদ্‌যন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি একদিকে পুষ্টিকর, অন্যদিকে সহজপাচ্য। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে সঠিক পরিমাণে ও সঠিক উপায়ে ওটস খাওয়াই সুস্থ জীবনের অন্যতম চাবিকাঠি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন