শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সংসদের দেওয়াল টপকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ‘জুলাই যোদ্ধারা’

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার সকালে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে শতাধিক ব্যক্তি পুলিশি বাধা অতিক্রম করে দেয়াল টপকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন এবং অতিথিদের জন্য বরাদ্দ আসনে বসে পড়েন। সকাল ১০টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণমুখী মঞ্চে বিকেল ৪টায় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মূল কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সকালেই সেখানে উপস্থিত হয়ে অবস্থান নেন। তারা দাবি জানান, জুলাই সনদে জুলাই যোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে এবং দায়মুক্তি ও সুরক্ষা আইন অবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে।

ঘটনার পরপরই সংসদ এলাকা জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের আহ্বান জানান। মঞ্চ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়।

২০২৪ সালের রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয় সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম ধাপে ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠকে ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ১৯টি মৌলিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে ১০টি প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া হয়।

‘জুলাই জাতীয় সনদে’ মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে— যার মধ্যে ৪৭টি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এবং ৩৭টি আইন, অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য বলে চিহ্নিত। ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদে রাজনৈতিক সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে।

সনদে বলা হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, অন্তর্বর্তী সরকার তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করবে। তবে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে কিছু রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), খসড়া বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশের দাবি জানায়। তারা জানিয়েছে, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা ছাড়া কেবল স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় অংশ নিলে জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদ ভবনের এই ঘটনাটি আসলে একটি প্রতীকী বার্তা— যেখানে ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সরকারের কাছে তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন