বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে বায়ুদূষণ: জীবনকাল হ্রাস ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে উদ্বেগজনক চিত্র

বাংলাদেশে বায়ুদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), বিশ্বব্যাংক, পরিবেশ অধিদপ্তর (DoE) এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে—দূষণের কারণে শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, বরং গড় আয়ুও মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

জীবনকাল হ্রাসের প্রভাব

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (AQLI) অনুসারে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মানুষের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বৃদ্ধি পেত। ঢাকাবাসীর ক্ষেত্রে আয়ু বেড়ে যেত প্রায় ৭ বছর। চট্টগ্রামের মানুষও গড়ে ৬ বছরের বেশি বাড়তি আয়ুর সুযোগ পেত। বর্তমানে দেশের বার্ষিক গড় PM2.5 এর মাত্রা WHO নির্দেশিকার প্রায় ১৫ গুণ বেশি।

স্বাস্থ্যগত সংকট

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর ১ লাখ ২ হাজারের বেশি মানুষ বায়ুদূষণে মৃত্যুবরণ করছে। এর মধ্যে শিশু ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। বিশ্বব্যাংক ও WHO’র তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুহার ছাড়াও স্ট্রোক, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট এবং শিশুদের প্রি-টার্ম জন্মের মতো সমস্যায় দূষণের সরাসরি প্রভাব রয়েছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি

বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতিতেও বড় ক্ষতি করছে। গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার যানজট ও অনিয়ন্ত্রিত রুটে বাস চলাচল, শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজের ধুলো—এসব কারণে বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ও গবেষণা তথ্য

পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার বায়ুদূষণে যানবাহনের অবদান প্রায় ১০%, আর রাস্তার ধুলো থেকে আসে ৮% এর বেশি। তাছাড়া শিল্পকারখানা, ইটভাটা এবং নির্মাণকাজ থেকেও বড় ধরনের দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও করণীয়

চীন গত এক দশকে কঠোর নীতি, পুরনো গাড়ি প্রত্যাহার, শিল্প নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বায়ুদূষণ ৪০% কমাতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও একই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে। শুধুমাত্র সাময়িক ব্যবস্থা নয়, বরং দৃঢ় আইন প্রয়োগ, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং জনসচেতনতা জরুরি।

উপসংহার

বাংলাদেশের জন্য বায়ুদূষণ এখন শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্যও জাতীয় সংকট। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে এ দূষণ মানুষের জীবনকাল ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বড় হুমকির মুখে ফেলবে।

👉 সূত্র: WHO, বিশ্বব্যাংক, পরিবেশ অধিদপ্তর, AQLI ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন