বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের শুল্কচাপে ভারত–চীন ঘনিষ্ঠতা, তবে আস্থার সংকট বহাল

ভারত–চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অবিশ্বাস ও টানাপোড়েন বহু পুরোনো। ২০২০ সালে লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে সম্পর্ক কার্যত জমে ছিল। সীমান্তে চীনের আগ্রাসী তৎপরতা ও ভূখণ্ডগত দাবি নয়াদিল্লিকে দীর্ঘদিন সতর্ক রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভূরাজনীতির পালাবদলে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে নৈকট্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পর এশিয়ার শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন এসেছে। সেই সুযোগে চীন দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে সক্রিয় হয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই নয়াদিল্লি সফরে এসে এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়, চীন আবার ভারতকে বিরল খনিজ, রাসায়নিক সার ও টানেল খনন যন্ত্র সরবরাহ করবে—যা গলওয়ানের পর বন্ধ ছিল। ভারতের শিল্প, কৃষি ও প্রতিরক্ষা খাতে এসব উপকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে নতুন করে সরবরাহ শুরু হওয়া নয়াদিল্লির জন্য স্বস্তির বিষয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পদক্ষেপ বাণিজ্যের বাইরেও কূটনৈতিক বার্তা বহন করছে। চীন চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস করে ভারতের আস্থা অর্জন করতে। একই সময়ে ভারতের নীতি আয়োগ জানিয়েছে, টানা বিনিয়োগ হ্রাস রোধে সীমিত চীনা লগ্নি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। অর্থাৎ নয়াদিল্লিও বাস্তবতার নিরিখে কিছুটা নমনীয় হচ্ছে।

তবে সংশয়ও রয়ে গেছে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি এখনো অস্থির, আর পাকিস্তানের প্রতি চীনের সমর্থন অব্যাহত। তাই শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে সামলাতে গিয়ে বেইজিংয়ের কাছে অতি নির্ভরশীল হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক হার্শ প্যান্ট মন্তব্য করেছেন, বৈশ্বিক চাপ দুই দেশকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছে, তবে এটিকে আপাতত একটি ‘শীতল শান্তি’ বলাই যুক্তিযুক্ত।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও নতুন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর গুজরাটভিত্তিক রুশ মালিকানাধীন নায়রা এনার্জি চার বছর পর প্রথমবারের মতো চীনে ডিজেল পাঠিয়েছে। এ ঘটনাও দুই দেশের অর্থনৈতিক সেতুবন্ধনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

সব মিলিয়ে, মোদি সরকার একদিকে সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রেখে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চীনের সঙ্গে সহযোগিতার পথ খুঁজছে। তবে এই সমীকরণ কতটা টিকে থাকবে—তা নিয়ে সংশয় কাটছে না।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন