বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্পের উদ্যোগে সরাসরি বৈঠকের আলোচনা, তবে ক্রেমলিন সতর্ক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও ক্রেমলিন তাৎক্ষণিক শীর্ষ বৈঠকের ধারণাকে খাটো করে দেখছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার জোর দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের ওপর। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বার্তা এসেছে, এমন বৈঠক হলে তা ধাপে ধাপে প্রস্তুত করতে হবে।

ট্রাম্পের অবস্থান ও পুতিনের প্রতিক্রিয়া

আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এবং হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ ও জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প বলেন, “আমরা খুব শিগগিরই বুঝতে পারব পুতিন আসলেই সমঝোতায় আগ্রহী কি না।” তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট হয়তো যুদ্ধ থামাতে অনিচ্ছুক হতে পারেন।

পুতিন প্রথমে আলোচনায় আগ্রহ দেখালেও পরদিনই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ শর্তারোপ করেন—কোনো বৈঠক হলে তা বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে এগোতে হবে।

মস্কো সফরের প্রস্তাব ও ইউক্রেনের আপত্তি

রাশিয়ার পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে জানানো হয়, জেলেনস্কি চাইলে মস্কোতে এসে বৈঠক করতে পারেন। কিন্তু কিয়েভ এই প্রস্তাব কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল রাশিয়ার এমন একটি প্রস্তাব যা ইউক্রেন কখনোই গ্রহণ করতে পারবে না।

ইউরোপীয় নেতাদের অবস্থান

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুতিনকে “শিকারি” ও “প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দৈত্য” আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি শান্তি প্রক্রিয়ায় আন্তরিক নন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টুবও সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, পুতিনকে খুব কমই বিশ্বাস করা যায়।

তবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা সরাসরি বৈঠকের ধারণাকে সমর্থন করছেন, যেন ট্রাম্পকে প্রলুব্ধ করে মস্কোর প্রতি কড়া অবস্থানে ফিরিয়ে আনা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা

ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনে কোনো যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি হলে ইউরোপীয় দেশগুলো স্থলবাহিনী পাঠালে যুক্তরাষ্ট্র আকাশপথে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তবে মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে গঠিত Coalition of the Willing ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইউক্রেনের জন্য একটি ‘রিএস্যুরেন্স ফোর্স’ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়।

যুদ্ধের বাস্তবতা ও দীর্ঘসূত্রিতা

২০১৯ সালের পর থেকে পুতিন ও জেলেনস্কির মুখোমুখি বৈঠক আর হয়নি। এ সময়ে ইউক্রেনে হাজারো প্রাণহানি ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। পুতিন বরাবরই জেলেনস্কিকে অবৈধ নেতা আখ্যা দিয়ে আসছেন এবং যুদ্ধবিরতির জন্য ইউক্রেনের নেতৃত্ব পরিবর্তনের শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।

যদিও ট্রাম্প এখনো সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনা দেখছেন, তবে ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন এই যুদ্ধের সমাধান এতটা সহজ নয়। আগামী দিনগুলোতে ওয়াশিংটন ও ন্যাটো নেতাদের বৈঠক থেকে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন