শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসরায়েলে গভীর বিভাজন, নেতানিয়াহুর কাঁধে যুদ্ধ ও রাজনীতির চাপ

প্রায় দুই বছর আগে হামাসের হামলার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলকে ঐক্যবদ্ধ দেখাতে চেয়েছেন। তার ঘোষণা ছিল— “আমরা লড়ব, পিছপা হব না, বিজয় ছিনিয়ে আনব।” কিন্তু বাস্তবে আজকের ইসরায়েল ইতিহাসের অন্যতম বিভক্ত এক সমাজে পরিণত হয়েছে।

গাজার যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ সংকট

৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েল বড় ধাক্কা খায়। শতাধিক নিহত ও বন্দী হওয়ার স্মৃতি এখনো ইসরায়েলি সমাজে তীব্র আঘাত হিসেবে রয়ে গেছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলেও ইসরায়েলের জনগণ নিজেদের ভেতরেই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে— একপক্ষ পূর্ণ সামরিক জয় চায়, অন্যপক্ষ যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে।

ভিন্ন ভিন্ন জনমত

সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ গাজার মানবিক বিপর্যয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। অন্যদিকে আরব সংখ্যালঘুরা ব্যাপকভাবে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। রাজধানী তেলআবিবে ছোট ছোট দল মানববন্ধনে গাজার নিহত শিশুদের নাম ও ছবি নিয়ে নীরব প্রতিবাদ করছে। তবে তারা এখনো সংখ্যালঘু কণ্ঠস্বর।

মিডিয়া ও তথ্যযুদ্ধ

অনেক সমালোচক বলছেন, ইসরায়েলি মিডিয়া গাজার বাস্তব কষ্টের ছবি তুলে ধরছে না। একইসঙ্গে নেতানিয়াহুর সরকার আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে “ইহুদি বিদ্বেষ” বলে আখ্যা দিচ্ছে। এতে করে ইসরায়েলের ভেতরকার গণতান্ত্রিক মতভেদ আরও প্রকট হচ্ছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

নেতানিয়াহুর সরকার আগেও অজনপ্রিয় ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার অবস্থান কিছুটা শক্ত হলেও বিরোধীরা অভিযোগ করছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন যাতে রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকা যায়। তার বিরুদ্ধে আগের দুর্নীতির মামলাও এখনো ঝুলে আছে। এদিকে সরকারের চরম ডানপন্থী মন্ত্রীরা দাবি করছেন— শুধু হামাসের পরাজয় নয়, বরং গাজাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে।

ধর্মীয় বনাম ধর্মনিরপেক্ষ ইসরায়েল

যুদ্ধ ইসরায়েলের ধর্মীয় ডানপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর বিভাজন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জেরুজালেমে ইহুদি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীরা যুদ্ধকে “অলৌকিক সুযোগ” মনে করছে, যেখানে নতুন করে বাইবেলীয় ভাবাদর্শে রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে। অপরদিকে তেলআবিবে প্রতিবাদকারীরা বলছে, এই যুদ্ধ শুধু বন্দিদের জীবনকেই বিপদে ফেলছে না, বরং ইসরায়েলের ভেতরকার সমাজকেও ছিন্নভিন্ন করছে।

সামনে অনিশ্চিত পথ

প্রায় ২০ জন ইসরায়েলি বন্দি এখনও গাজায় জীবিত আছেন বলে ধারণা। পরিবারগুলো সরকারের কাছে জিম্মি বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু নেতানিয়াহু নতুন সামরিক অভিযান ঘোষণা করে বসেছেন, যা নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরেও আপত্তি উঠেছে।

অতএব, ইসরায়েল এখন এক দ্বিধাবিভক্ত রাষ্ট্র— যেখানে একপাশে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার, অন্যপাশে সমাজ ও রাজনীতির ভেতর গভীর ক্ষতচিহ্ন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন