বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসা—হতাশ কিয়েভ ও ইউরোপ

আলাস্কার বৈঠক থেকে প্রত্যাশিত কোনো সমঝোতা আসেনি। শুরু থেকেই এটি অনুমেয় ছিল, বিশেষ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অনুপস্থিত থাকায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি দাবি থেকে সরে এসে সরাসরি শান্তিচুক্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়া কিয়েভ এবং ইউরোপের মিত্রদের গভীরভাবে হতাশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধবিরতি বনাম শান্তিচুক্তি

রাশিয়ার অবস্থান সবসময়ই ছিল যে যুদ্ধবিরতি কেবল একটি পূর্ণাঙ্গ সমঝোতার অংশ হতে পারে, যেখানে রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করা হবে—যা কার্যত ইউক্রেনের আত্মসমর্পণের সমতুল্য। ট্রাম্পের বক্তব্যে সেই অবস্থানই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “এই ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সেরা উপায় হলো সরাসরি শান্তিচুক্তি করা। যুদ্ধবিরতি প্রায়ই টেকে না।”

এমন অবস্থান ইউক্রেনের মূল দাবির বিপরীতে গেছে। কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা সবসময় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি আগে চান। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধক্ষেত্রে সময় কিনতে সক্ষম হয়েছেন। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সামরিক বিজ্ঞান পরিচালক ম্যাথিউ স্যাভিল বলেন, “যদি পুতিনের লক্ষ্য হয়ে থাকে তার সামরিক অভিযানে তাৎক্ষণিক কোনো সীমাবদ্ধতা এড়ানো, তবে তিনি সফল হয়েছেন।”

ইউরোপের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের পর পুতিন সতর্ক করেছেন যেন ইউক্রেন ও ইউরোপীয়রা “অগ্রগতির পথে বাঁধা” না দেয়। তবে কিয়েভ ও মিত্রদের চোখে ট্রাম্পই সেই অগ্রগতি নষ্ট করেছেন।

ইউরোপীয় নেতারা প্রকাশ্যে কূটনৈতিক ভঙ্গিতে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেও হতাশা আড়াল করতে পারছেন না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টা আমাদেরকে রাশিয়ার অবৈধ যুদ্ধের অবসানের সবচেয়ে কাছাকাছি এনেছে।” একই সঙ্গে তিনি ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর জোর দেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তাগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর নীতির মতো হতে পারে।

জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া

আলাস্কার পর ট্রাম্প ফোনে জেলেনস্কির সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বলেন। পরে ইউরোপীয় নেতারাও আলোচনায় যোগ দেন। প্রথমে জেলেনস্কি আশাবাদী মন্তব্য করেন এবং সোমবার ওয়াশিংটনে সফরের ঘোষণা দেন। তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর তিনি জরুরি সুরে লিখেন, “হত্যাযজ্ঞ এখনই বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধক্ষেত্র, আকাশ ও আমাদের বন্দর অবকাঠামোর ওপর আগ্রাসন বন্ধ হোক।”

ট্রাম্পকে পরামর্শ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “চুক্তি করো। রাশিয়া একটি বড় শক্তি, ইউক্রেন তা নয়।”

পুতিনের লাভ ও নতুন প্রশ্ন

আলাস্কা বৈঠক কোনো ফল না আনলেও পুতিনের জন্য তা প্রতীকী জয় বয়ে এনেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে এবং কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি আপাতত পিছিয়ে গেছে। ট্রাম্প বলেছেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে তার আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগবে।

এখন মূল প্রশ্ন—সোমবার জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে গেলে তিনি কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন এবং পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প–পুতিনের সঙ্গে একই কক্ষে বসলে ইউক্রেনের ভাগ্য কীভাবে নির্ধারিত হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন