রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

গণতন্ত্র ফেরানোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে আছে: সতর্ক থাকার আহ্বান অধ্যাপক জাহিদ হোসেনের

১৮ জুলাই ২০২৫

“গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই যখন এগিয়ে চলেছে, তখনই এক শ্রেণির ষড়যন্ত্রকারী ভেতরে ভেতরে তা ভেস্তে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত” — শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীরা এখন ঘাপটি মেরে আছে। তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজ আমাদের দায়িত্ব।”

তিনি বলেন, “মিটফোর্ডের ঘটনার পর বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহ দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে, দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে। তারপরেও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে নানা ট্যাগিং করা হচ্ছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” সরকার ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তারা আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে, অন্যের ক্রীড়ানক হয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না।”

ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির আহ্বান

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “বিএনপি ও সমমনা দলগুলো মিলে একটি সুসংগঠিত কর্মসূচি দিয়েছে। কিন্তু যারা আজ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তারা নিজেদের কোনো কর্মসূচি না দিয়ে বরং নির্বাচন পদ্ধতি বা স্থানীয় সরকারের কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্রের লড়াই জাতীয় নির্বাচনের জন্য, স্থানীয় সরকারের জন্য নয়। পিআর পদ্ধতি (Proportional Representation) নিয়ে কথা বলে মূলত গণতন্ত্র বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে।”

তার ভাষায়, “গণতন্ত্রকে ক্ষমতাচ্যুত করে কেউ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। জনগণ যদি ফুঁসে ওঠে, তাহলে সেই আগুনে ষড়যন্ত্রকারীরাই পুড়ে ছারখার হবে।”

গোপালগঞ্জের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র

এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতার প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, “গোপালগঞ্জের মতো উচ্চ-নিরাপত্তার এলাকায় বোমা হামলা কিভাবে সম্ভব হলো? কোটালিপাড়ায় অতীতে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা ঘটেছিল, এখনো এমন ঘটনা কীভাবে ঘটছে? যদি ষড়যন্ত্র না থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত বিশাল উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটে কীভাবে?” তিনি এ ঘটনায় গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেন।

তিনি আরও বলেন, “ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নড়াইলসহ আশপাশের জেলায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হয়েছে, তাহলে শুধু গোপালগঞ্জেই কেন এমন পরিস্থিতি? এসব ঘটনা শুধুই সরকারের দোসরদের নয়, আমাদের ভেতরকার ষড়যন্ত্রকারীদের দিকেও আঙুল তোলে।”

ঐক্য বিনষ্টের আলামত

রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে পেশাজীবীদের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কিছু রাজনৈতিক নেতৃত্ব ব্যক্তিস্বার্থে ঐক্যকে আঘাত করছে।” তিনি সাবধান করে বলেন, “এই বিভাজনের ফলে জনগণের মনোবল দুর্বল হয় এবং স্বৈরাচারীরা সুবিধা নেয়। আমরা ইউনুস সাহেবের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি, কিন্তু বিভাজন সৃষ্টি করে তিনি যে হতাশ করেছেন, তা বলতেই হয়।”

মবজাস্টিস ও বিচারহীনতার অভিযোগ

মবোক্রেসি বা মবজাস্টিসের বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাহিদ বলেন, “দেশে একের পর এক ঘটনা ঘটছে—মিটফোর্ড, মুরাদনগর, কক্সবাজার, পাটগ্রাম, কচুয়া, পটিয়া—কিন্তু অপরাধীদের দমন করার কঠোরতা দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও এসব অপরাধ কিভাবে হচ্ছে, তা দেশবাসী জানতে চায়।”

তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ সব বাহিনী মাঠে থাকা সত্ত্বেও যদি অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়—আপনারা কি সত্যিই প্রতিরোধে আন্তরিক?”

ক্ষমতার দায়িত্ব ও সতর্কবার্তা

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু আপনাদের দায়িত্ব সীমিত সময়ের জন্য এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। জনগণ আপনাদের সাফল্যকে স্বাগত জানাবে, কিন্তু ব্যর্থতা ক্ষমা করবে না। মনে রাখবেন, সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশেই, কোনো বিদেশি রাজধানীতে নয়।”

গোপালগঞ্জ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “গোপালগঞ্জের ঘটনায় তদন্ত কমিটিকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে—এটি জাতির সঙ্গে মস্করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন ঘটনার তদন্ত দু-তিন দিনের মধ্যেই হওয়া উচিত।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “হঠাৎ কেন ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি? এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।”

অধ্যাপক ইউনুসকে সতর্কবার্তা

সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, “অধ্যাপক ইউনুস সাহেব, আপনি নোবেল বিজয়ী হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণ করুন। কিন্তু আজকে আপনি যেভাবে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন, সেটি দেশের পক্ষে যাচ্ছে না। আপনার কর্মকাণ্ডে যেন জনগণের ন্যায়বিচার বঞ্চিত না হয়।”

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনি যদি অতীতের মতো ব্যর্থ হন, তবে আপনাকেও ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের মতো পালিয়ে যেতে হতে পারে।”

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন

সমাবেশটি পরিচালনা করেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য আবদুল কাদের চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন: সৈয়দ আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুল আলম সেলিম, অবসরপ্রাপ্ত সচিব আবদুল বারী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক রফিকুল কবীর লাবু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকী, সাংবাদিক মোরসালিন নোমানি, রাশেদুল হক, ও সাঈদ খান প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে একটি মৌন মিছিল কদম ফোয়ারা ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনেই শেষ হয়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন