বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

শরীরে এলডিএল ও এইচডিএল কোলেস্টেরল: ভারসাম্য হারালেই বিপদ

১৮ জুলাই ২০২৫

বর্তমান যুগে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী অসুস্থতার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। এ ঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ হলো শরীরে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, রক্তে এলডিএল (LDL – Low-Density Lipoprotein) ও এইচডিএল (HDL – High-Density Lipoprotein) নামক দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে, যা শরীরের স্বাস্থ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এলডিএল কে সাধারণত ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ এবং এইচডিএল কে ‘ভাল কোলেস্টেরল’ বলা হয়ে থাকে।

এলডিএল (LDL): যখন মাত্রা ছাড়ায় বিপদ

এলডিএল কোলেস্টেরল রক্তনালীর ভেতর চর্বি জমিয়ে রাখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চর্বি জমা হয়ে রক্তনালীর গায়ে প্লাক তৈরি করে, যা রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। ফলে বাড়ে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এলডিএল-এর আদর্শ মাত্রা ১০০ mg/dL বা তার কম হওয়া উচিত। তবে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা আরও নিচে (৭০ mg/dL) নামিয়ে আনা প্রয়োজন হতে পারে।

অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, ট্রান্সফ্যাট, ধূমপান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ এলডিএল মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

এইচডিএল (HDL): শরীরের রক্ষাকবচ

এইচডিএল কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেয়ালে জমে থাকা খারাপ চর্বি (এলডিএল) অপসারণে সাহায্য করে। এটি লিভারে কোলেস্টেরল ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে দেহ থেকে বের করে দেয়, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

পুরুষদের ক্ষেত্রে এইচডিএল-এর আদর্শ মাত্রা ৪০ mg/dL বা তার বেশি, আর নারীদের ক্ষেত্রে ৫০ mg/dL বা তার বেশি হওয়া উচিত।

নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন: ওমেগা-৩), বাদাম, অলিভ অয়েল এবং ধূমপান পরিহার এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।

এলডিএল-এইচডিএল এর ভারসাম্যই মূল চাবিকাঠি

শরীরে কেবল এলডিএল কমিয়ে ফেললেই চলবে না, এইচডিএল-এর পর্যাপ্ত উপস্থিতিও জরুরি। দুইয়ের মধ্যে সুষম ভারসাম্য বজায় রাখাই স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এলডিএল যত কম, এবং এইচডিএল যত বেশি – তত ভালো।

কীভাবে রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়

১. খাবার বেছে নিন: ফাস্টফুড, লাল মাংস, চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করুন।

২. বেশি করে ফলমূল ও শাকসবজি খান: আঁশযুক্ত খাবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা বা হালকা এক্সারসাইজ করুন।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নষ্ট করে।

৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন: এই দুটি উপাদান কোলেস্টেরলের নেগেটিভ পরিবর্তন ঘটায়।

৬. চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা: প্রতি ৬ মাস বা বছরে একবার লিপিড প্রোফাইল করানো উচিত।

চিকিৎসকদের বার্তা

ঢাকার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আহসান হাবিব বলেন, “বাংলাদেশে সচেতনতার অভাবে অনেক মানুষই জানেন না যে তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক। নিয়মিত চেকআপ না করা এবং খাদ্যাভ্যাসে অবহেলা বড় বিপদ ডেকে আনে।”

তিনি আরও বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত এলডিএল বা কম এইচডিএল—দুটিই একসময় হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। অথচ সচেতন হলে এবং জীবনযাত্রা বদলালে তা অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য।”

উপসংহার

কোলেস্টেরল নিয়ে ভয় না পেয়ে সচেতন হওয়াই সবচেয়ে ভালো পথ। শরীরের ভেতরের এই নিঃশব্দ শত্রু অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই ক্ষতি করে দেয়। তাই সময়মতো রক্ত পরীক্ষা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং সক্রিয় জীবনযাপনই আমাদের সুস্থ হৃদয়ের রক্ষাকবচ হতে পারে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন