শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব: বিগত বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশে চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম দুই সপ্তাহেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ জন। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে, যা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু এখন আর শুধু বর্ষাকালের সমস্যা নয়—এটি একটি সারাবছরের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ২৮ হাজার মানুষ এবং মারা যায় ১০৫ জন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজারে, মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটে—আক্রান্ত হয় প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালেও পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল, যেখানে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু হয় ৭৬৫ জনের।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল ও খুলনা মহানগর এলাকাগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের মশা নিয়ন্ত্রণে সময়োপযোগী কার্যক্রম না থাকায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। বহু এলাকায় এখনও জমে থাকা পানি, নির্মাণাধীন ভবনের খোলা ড্রেন ও পাত্রগুলো এডিস মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে। যদিও সিটি করপোরেশনগুলো দাবি করছে, তারা নিয়মিত ফগিং ও লার্ভা নিধন অভিযান চালাচ্ছে।

ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় বেড়েই চলেছে। অনেক হাসপাতালেই শয্যা সংকট দেখা দিচ্ছে, প্লাটিলেট পরীক্ষার সুযোগ সীমিত এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্যালাইনের স্বল্পতা রয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, অনেক রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসায় অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।

চলতি বছর ডেঙ্গুর ধরনে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, যা প্রাণঘাতী হওয়ার ঝুঁকি বহন করে। এ অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘এক দিন, এক ঘণ্টা’ পরিষ্কার অভিযানের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে শুধুমাত্র প্রচারণা নয়, কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত না হলে এ ধরনের কর্মসূচি ফলপ্রসূ হবে না বলে মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি নাগরিকদেরকেও নিজেদের ঘরের আশেপাশে পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ এবং মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সময় এখনই। চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং নাগরিক সচেতনতার সমন্বয় ছাড়া এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে। বিগত বছরের ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে চলতি বছরের প্রাদুর্ভাব আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন