শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইউক্রেন ইস্যুতে আসিয়ানে ফের যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বৈঠক, ‘ইতিবাচক ধারার’ আশা মস্কোর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, প্রান্তকাল

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ফের মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ইউক্রেন যুদ্ধই আলোচনার মূল এজেন্ডা হিসেবে উঠে আসে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুই শীর্ষ কূটনীতিকের মধ্যে প্রায় ৫০ মিনিট দীর্ঘ বৈঠক হয়। শুক্রবারের বৈঠক থেকে কোনো বিস্তারিত প্রকাশ না হলেও, রুবিও বৃহস্পতিবারের আলোচনার পর সাংবাদিকদের জানান, ইউক্রেন শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করতে “নতুন ও ভিন্ন ধরনের পন্থা” নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি একে এমন কিছু বলব না যা নিশ্চিতভাবে শান্তি আনতে পারে, তবে এটি একটি ধারণা, যা আমি প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরব।”

ল্যাভরভ শুক্রবার বলেন, “আমরা ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা করেছি। প্রেসিডেন্ট [ভ্লাদিমির] পুতিন যেভাবে তার অবস্থান ৩ জুলাই প্রেসিডেন্ট [ডোনাল্ড] ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় ব্যাখ্যা করেছিলেন, সেটিই পুনরায় নিশ্চিত করেছি।”

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিক ইউক্রেন ছাড়াও ইরান, সিরিয়া এবং বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে “গঠনমূলক ও খোলামেলা আলোচনা” করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও, এমন বৈঠক দুই দেশের মধ্যে বিরল সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করেছে। তবে মস্কো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে।

রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে বলেন, “আমি মনে করি না মস্কো-ওয়াশিংটনের মধ্যে ইতিবাচক ধারার অবসান হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এখন ‘জিগজ্যাগ নীতি’ অনুসরণ করছে। আমরা এটাকে বড় কোনো সংকট হিসেবে দেখছি না।”

তিনি আরও জানান, আগামী গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে অবশিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে নতুন আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

রুবিও বলেন, “আমরা আলোচনা করছি, এটিই শুরু। কিন্তু এরপর কী হয়, সেটিই আসল ব্যাপার।”

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক রুবিওর

এদিকে, এশিয়ায় দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সফরে কুয়ালালামপুরে অবস্থানরত মার্কো রুবিও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গেও শুক্রবার সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। মুখোমুখি এ বৈঠক তাদের প্রথম, এমন প্রেক্ষাপটে যখন এশিয়া-প্যাসিফিকে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

রুবিও আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম এবং পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন, যেখানে চীন, রাশিয়া, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত।

এই কূটনৈতিক তৎপরতা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন করে তীব্র আকার ধারণ করেছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী মাসে শুল্ক পুনর্বহালের বিষয়ে সতর্ক করেছে। এর আগে পাল্টাপাল্টি শুল্কের ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে ওঠে।

চীন সতর্ক করেছে, যে দেশগুলো বেইজিংকে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র আটটি আসিয়ান দেশ, মালয়েশিয়াসহ, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন বলছে, বাণিজ্য ভারসাম্য আনতেই এই পদক্ষেপ, যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গেই সম্পর্কের ফাটল ধরতে পারে।

শুক্রবার আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে বৈশ্বিক উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, “নিয়মভিত্তিক, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, মুক্ত, ন্যায্য, টেকসই এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।”

তারা আরও জানান, “এই লক্ষ্যে সকল অংশীদারের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন