শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

লিবিয়ায় অপহৃত দুই প্রবাসীকে ৪২ দিন পর দেশে ফিরিয়ে আনল পিবিআই

লিবিয়ায় অপহৃত দুই বাংলাদেশি প্রবাসীকে মুক্তিপণের কবল থেকে ৪২ দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)। উদ্ধারকৃতরা হলেন—আলমগীর হোসেন (৪৫) এবং সিরাজ উদ্দিন (৩৫)।

পিবিআই সূত্র জানায়, গত ৮ জানুয়ারি লিবিয়ার ত্রিপোলির জমাজৈতন এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় অপহৃত হন আলমগীর ও সিরাজ। অপহরণকারীরা তাঁদের পরিবারের কাছে জনপ্রতি প্রায় ২২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং ভিডিও কলে নির্মমভাবে নির্যাতনের দৃশ্য দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

অপহরণের ঘটনায় ভিকটিম আলমগীরের বড় ভাই ঢাকার আদাবর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) তদন্ত শুরু করে।

তদন্তের এক পর্যায়ে, গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা এলাকা থেকে মো. রাসেল হক (২৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। রাসেল লিবিয়ায় থাকা তার মামা কামাল হোসেনের সঙ্গে মুক্তিপণের টাকার বিষয়ে যোগাযোগ রাখতেন। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

পরে, ভিকটিম পরিবারের পাঠানো ৪ লাখ টাকা লেনদেনের সূত্র ধরে পিবিআই ১৬ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ এলাকা থেকে আরও একজন আসামি, মো. মিন্টু ফরাজী (৩৯) কে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে একটি স্যামসাং মোবাইল সেট ও ব্যাংক লেনদেনের নথি উদ্ধার করা হয়। এই অর্থ লেনদেনে লিবিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলাম যুক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

অপহরণকারীরা ভিকটিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালাত। হাত-পা বেঁধে লাঠি, বৈদ্যুতিক তার ও পিভিসি পাইপ দিয়ে মারধর করা হতো। শীতের মধ্যে উলঙ্গ করে প্রাচীরের সঙ্গে ঠেসে পেটানো হতো এবং খাবার-পানির সঙ্কটে রাখা হতো।

শেষ পর্যন্ত ১৮ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার ত্রিপোলির জিলজিয়া হাসপাতাল এলাকায় ভিকটিমদের ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। পরে তারা ব্র্যাক মাইগ্রেশন এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন।

গত ৯ জুলাই পিবিআই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আলমগীরকে হেফাজতে নেয়। অপর ভিকটিম সিরাজ উদ্দিনের দেশে ফেরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

অভিযানে উদ্ধার করা আলামতের মধ্যে রয়েছে দুইটি মোবাইল ফোন, ব্যাংক লেনদেনের নথি, নির্যাতনের ভিডিও-ছবি, এবং আইওএম ও ব্র্যাক মাইগ্রেশনের সহযোগিতার প্রমাণপত্র।

মামলাটি পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)-এর এসআই মো. জাকারিয়া আলমের নেতৃত্বে তদন্ত করা হয়। অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই জনাব মোস্তফা কামালের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. এনায়েত হোসেন মান্নান পিপিএম (সেবা)-এর দিকনির্দেশনায় অভিযান পরিচালিত হয়।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন