শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

হাওর সুরক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

হাওরের সুরক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে সরকার বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে নেত্রকোণা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকার আয়োজনে ‘হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। সেমিনারে সার্বিক সহযোগিতা করে গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশন।

উপদেষ্টা বলেন, “হাওরের ইকো সিস্টেম পৃথিবীতেই বিরল। এটি সুরক্ষিত করতে হবে। হাওরের সীমানা নির্ধারণ করে কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলনের মতো ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।” তিনি জানান, হাওর মহাপরিকল্পনার কাজ ২০২৩ সালে শুরু হয় এবং তা হালনাগাদ করা হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনায় হাওর এলাকার মানুষের মতামত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে পাঁচটি হাওরে বাঁধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, পর্যটন সুরক্ষা এবং নীতিমালা প্রণয়নের চারটি প্রধান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “হাওরে কখন বাঁধ নির্মাণ হবে, কীভাবে স্থানীয় উপকারভোগী নির্ধারণ করা হবে, আর কাদেরকে কাজে যুক্ত করা হবে সে সংক্রান্ত নির্দেশিকা সংশোধন করা হবে। বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত না করলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।”

রিজওয়ানা হাসান বলেন, “কালনার হাওর, খরচার হাওর, কালিয়াকোটা হাওরসহ পাঁচটি হাওরে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শুধু বৃক্ষরোপণ নয়, মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, গাছ লাগানোর পর দেখা যায় ৯০ ভাগই জ্বালানির জন্য কেটে ফেলা হয়।”

হাওরের পর্যটন নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হাওরে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে সুরক্ষা আদেশ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে উল্লেখ থাকবে পর্যটকরা কী করতে পারবেন, কী পারবেন না। পর্যটন মানে গান শোনা বা বারবিকিউ পার্টি নয়। প্রকৃতিকে উপভোগের জন্য ট্যুরিজম। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।”

তিনি বলেন, “হাওরের সীমানা নির্ধারণে ভিন্নতা রয়েছে। কিছু অংশ নদী, পুকুর, খাল এবং ধানি জমি হিসেবে মানুষের নামে রেকর্ডকৃত, যা হাওর ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তোলে।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোণা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকার সভাপতি রফিক মুহাম্মদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ মোফাজ্জল।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের সাবেক পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুব হাসান শাহীন, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তাহমিনা খানম, আরটিভির বার্তা প্রধান ইলিয়াস হোসাইন, কিশোরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকার সভাপতি এরফানুল হক নাহিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান হাওর রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান জানান।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন