বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ইউক্রেন কিভাবে বিশ্বের অন্যতম ডিজিটাল দেশ হয়ে উঠলো

রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের দিনে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, কিয়েভের রাস্তায় গুলি-বন্দুকের লড়াইয়ের মধ্যে পড়েছিলেন ইউক্রেনের উপ-ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মন্ত্রী ওলেক্সান্দ্র বর্নিয়াকভ। ওই ভয়াবহ দিনেও তাঁর কাছে দায়িত্ব ছিল সরকারের ডিজিটালাইজেশন চালিয়ে যাওয়া—আর সেটিই ইউক্রেনকে নিয়ে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্রগুলোর তালিকার শীর্ষে।

২০১৯ সালে চালু হওয়া ইউক্রেনের ডিয়া (Diia) নামের অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকেরা এখন ৪০ ধরনের সরকারি সেবা পান মোবাইলেই—ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, বিয়ের আবেদন থেকে শুরু করে আরও নানা কাজ। এমনকি ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় জাতীয় প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটও এই অ্যাপে দেওয়া যায়।

বর্তমানে Diia অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ২৭ লাখের বেশি। ওয়েবভিত্তিক পোর্টালেও ১৩০টি সেবা রয়েছে।

ওলেক্সান্দ্র বর্নিয়াকভের মতে, এই খাতে ইউক্রেন এখন এস্তোনিয়াকেও ছাড়িয়ে গেছে। “আমি সৌদি আরব ছাড়া আর কাউকে আমাদের চেয়ে এগিয়ে দেখিনি,” বলেন তিনি।

তাহলে যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেন কীভাবে এমন বিপ্লব ঘটাতে পারলো?

এর পেছনে অন্যতম বড় কারণ দেশের বিশাল প্রযুক্তি দক্ষ জনশক্তি।

দুই দশক ধরে ইউক্রেন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আউটসোর্সিং হাব হিসেবে পরিচিত। বর্নিয়াকভ জানান, দেশে এখন অন্তত তিন লাখ সফটওয়্যার ডেভেলপার কাজ করছেন, যাঁরা জটিল প্রজেক্ট সামলানোর অভিজ্ঞতায় দক্ষ।

তিনি আরও জানান, Diia অ্যাপ তৈরি করতে খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে দশ মিলিয়ন ডলার। অথচ ইউকে বা পশ্চিমা দেশে সেই খরচ হয়তো পাঁচ-দশ গুণ বেশি হতো।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ডিজিটাল গভর্নমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ডেভিড ইভস বলেন, ইউক্রেনের সাফল্যের পেছনে আছে সঠিক প্রস্তুতি।

তারা আগে তৈরি করেছিল ডেটা এক্সচেঞ্জ সিস্টেম, যার মাধ্যমে সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে তথ্য সহজেই বিনিময় হয়। এর ওপর ভিত্তি করেই Diia অ্যাপ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে নাগরিকদের একবার তথ্য দিলেই সেটি সব সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে, পুনরায় তথ্য দিতে হচ্ছে না। এতে সরকারকেও আলাদা আলাদা তথ্য সংরক্ষণের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।

যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও অ্যাপে যুক্ত হয়েছে নতুন সেবা। যেমন, যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের আবেদন কিংবা শত্রুপক্ষের সৈন্যের অবস্থান জানানোর সুবিধা।

“আমরা যুদ্ধসংক্রান্ত ১৫টি নতুন সেবা চালু করেছি,” জানান বর্নিয়াকভ।

ডেভিড ইভসের মতে, যুদ্ধই ইউক্রেনকে ডিজিটালাইজেশনের পথে এগিয়ে দিয়েছে। “যুদ্ধকালে সেবা দেওয়ার তাগিদ নিয়ম-নীতি ছাড়িয়ে যায়,” বলেন তিনি।

ভবিষ্যতের দিকেও নজর রাখছে ইউক্রেন। Diia অ্যাপে যুক্ত হতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। বর্নিয়াকভ বলেন, “আমরা সরকারী সেবা পাওয়ার পদ্ধতিই বদলে দিতে চাই।”

তবে অধ্যাপক ইভস সতর্ক করে বলেন, “এআই দারুণ সম্ভাবনাময়। কিন্তু ভালো রাস্তাই না থাকলে ফারারি চালিয়ে লাভ নেই।”

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চললেও, ইউক্রেনের ডিজিটাল বিপ্লব দেখাচ্ছে—প্রযুক্তি কিভাবে সঙ্কটে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন