শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই: সালাহ উদ্দিন

দেশে স্বৈরাচারের উৎপত্তি রোধ করতে হলে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, কেবল নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করলেই একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়; বরং রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ— নির্বাহী, বিচার ও আইনসভা— প্রত্যেককে নিজ নিজ সীমারেখায় থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতে গিয়েই সালাহ উদ্দিন এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি সত্যিকারের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করলে এখানেই স্বৈরাচারের জন্ম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধু নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করলেই হবে না। বরং প্রত্যেকটি অঙ্গকে তাদের নির্ধারিত কাজ করতে দিতে হবে— সেটাই হবে প্রকৃত ক্ষমতার ভারসাম্য (Balance of Power)।”

তিনি আরও বলেন, “যখন বিচার বিভাগ, আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগ পরস্পরের ওপরে আধিপত্য বিস্তার না করে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করবে, তখনই প্রকৃত গণতন্ত্র গড়ে উঠবে। এই ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ককে আমরা বলি ‘হারমোনিয়াস কো-অপারেশন’।”

সংস্কারে বিএনপির অবস্থান: মেয়াদ সীমা ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরিবর্তন দাবি

আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়— প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিত করা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন ভোটাধিকার, এবং সংসদের ৭০ অনুচ্ছেদে সংস্কার আনা। সালাহ উদ্দিন বলেন, “এই সংস্কারের মাধ্যমে কোনো অঙ্গের অধিকার খর্ব না করে রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সেই সংস্কার চাই, যার মাধ্যমে সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার নিশ্চিত হবে এবং যার ফলে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তিও অর্জিত হবে।”

“চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স” প্রতিষ্ঠার আহ্বান

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে এখন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনা হোক। কিন্তু অতীতে কেউ স্বৈরাচার হয়েছে বলে পুরো বিভাগকে দুর্বল বা বিলুপ্ত করা যায় না। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত প্রতিটি অঙ্গকে তাদের সীমারেখায় থেকে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা এবং সকলের মাঝে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠা করা।”

তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “শুধু নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে কোনো দিনও গণতন্ত্র গড়ে তোলা যাবে না।”

সভাপতির বক্তব্যে ধর্ম নিয়ে বিতর্কের ইঙ্গিত

আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, “জাতীয় ঐক্যমত্যের আলোচনায় ধর্মের বিষয়টি ইস্যু হিসেবে সামনে আসতে পারে। কিন্তু আমরা একটি বহুধা ধর্মবিশ্বাসী রাষ্ট্রে বাস করি। আমার ধর্ম আমার অন্তরের বিষয়, সেটিকে সংবিধানে লিখে অন্যকে অস্বস্তিতে ফেলা উচিত নয়।”

তিনি সকলকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “চোখ-কান খোলা রাখুন, দেখুন সত্যি সত্যি কী হচ্ছে।”

অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন— জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)–এর মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণফোরামের মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন