বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

IAEA-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতে ইরানি পার্লামেন্টে উত্তাল ভোট: নতুন পরমাণু উত্তেজনার ইঙ্গিত

২৫ জুন ২০২৫

ইরানের পার্লামেন্ট বুধবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত রাখার পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছে। দক্ষিণ ইসরায়েলের বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই গৃহীত এই সিদ্ধান্ত পারমাণবিক ইস্যুতে তেহরানের কৌশলে একটি বড় ধরনের মোড় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হওয়ার পরপরই উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি হয়। ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক’, ‘ইসরায়েলের মৃত্যু হোক’ ইত্যাদি স্লোগানে সংসদ কক্ষ মুখরিত হয়ে ওঠে। কিছু সংসদ সদস্য দাঁড়িয়ে তুমুল আবেগে বিলের পক্ষে বক্তব্য দেন, কেউ কেউ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র ও IAEA-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ তোলেন।

সংশ্লিষ্ট বিল অনুযায়ী, এখন থেকে IAEA ইরানের পরমাণু স্থাপনায় প্রবেশ বা পর্যবেক্ষণ চালাতে পারবে না, যদি না ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ তার জন্য অনুমতি প্রদান করে। পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ বলেন, “IAEA ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা এখন আর নিরপেক্ষ নয়। আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে বাধ্য নই।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের দ্বার অনেকটাই বন্ধ করে দিতে পারে। ইরান আগে থেকেই আংশিকভাবে IAEA-এর পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম সীমিত করেছিল, তবে এবার তা একেবারে স্থগিতের পথে।

IAEA মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “কূটনীতি এখনও সম্ভব, কিন্তু সহযোগিতা বন্ধ হলে উত্তেজনা শুধু বাড়বে।” অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, “এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, তার সূত্রপাত হয় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের একটি বৈজ্ঞানিক স্থাপনায় ধ্বংসাত্মক ক্ষতি হওয়ার পর। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান একাধিক পাল্টা হামলা চালায়, যার মধ্যে বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ধ্বংস অন্যতম।

এদিকে, ইরানের পার্লামেন্টে এই বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ায় এটি এখন দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিলে পাঠানো হবে, যারা এটি যাচাই-বাছাই করে আইনে রূপান্তর করবে।

বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্তকে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ হিসেবে দেখছে। তবে ইরান বলছে, এটি তাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত এবং তারা নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো কিছুই মেনে নেবে না।