বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

নোভার্টিস শেয়ার হস্তান্তরে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ

বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিংহভাগ শেয়ার দেশীয় প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অনুসরণ করা হয়নি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই কার্যত নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করা হয়েছে, এবং সরকারি স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে।

নোভার্টিসে সরকারের ৪০ শতাংশ শেয়ারের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। কোম্পানির সংঘবিধি অনুযায়ী, বিদেশি অংশীদার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে বিসিআইসি’র তা ক্রয়ের প্রথম অধিকার থাকার কথা। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বিসিআইসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিসিআইসিকে সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও, পরদিনই নোভার্টিসের ১৯১তম বোর্ড সভায় কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ সালের ১৯০তম বোর্ড সভায় বিসিআইসি’র প্রতিনিধি পরিচালকরা শেয়ার হস্তান্তরের সমঝোতা স্মারক (MoU) দেখতে চেয়েছিলেন, যা তখনও উপস্থাপন করা হয়নি।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বিসিআইসি’র নিজস্ব বোর্ড সভায় বিষয়টি কেবল “অবহিত” করা হয়, কোনো সক্রিয় অবস্থান নেওয়া হয়নি। এটি নীতিগতভাবে সরকারের আর্থিক স্বার্থ উপেক্ষার শামিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিটি শেয়ারের নিট সম্পদ মূল্য ছিল ৯৪৫.৭৩ টাকা। এমন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার উদ্যোগ না নেওয়াকে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, গোপন চুক্তির মাধ্যমে শেয়ারের বিক্রয় মূল্য কম দেখানো হয়েছে, যাতে করে বিসিআইসি’র ৪০ শতাংশ অংশীদারিত্বের বাজারমূল্যও অনুপাতিক হারে কমে যায়।

এই পরিস্থিতিতে সরকার রাজস্ব আদায় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূলত, শেয়ার বিক্রয় থেকে অর্জিত লাভের উপর যে গেইন ট্যাক্স পাওয়ার কথা ছিল, তা সম্ভাব্যভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এখনো অসম্পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ইতোমধ্যে নোভার্টিসের কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে নোভার্টিসের পণ্য বিপণন চলছে, এমনকি নোভার্টিসের কারখানায় রেডিয়েন্টের যন্ত্রপাতিও প্রবেশ করানো হয়েছে। অথচ, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলমান এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ওপর জোর দিচ্ছেন। প্রথমত, তৎকালীন বিসিআইসি চেয়ারম্যানের ভূমিকা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, একটি স্বতন্ত্র অডিট ফার্মের মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তরের প্রকৃত বাজার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ তদন্ত ও মূল্যায়ন ছাড়া রাষ্ট্রীয় সম্পদের এ ধরনের হস্তান্তর প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যাবে এবং ভবিষ্যতে সরকারি অংশীদারিত্ববিশিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা আরও দুরূহ হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন