শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে ৫০ কোটি টাকার স্টোর রেন্ট ফাঁকি: সিআইডির অভিযানে প্রতারক চক্রের মূল হোতা গ্রেফতার

১৮ জুন ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে স্টোর রেন্ট ফাঁকি দিয়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি খালাসের চেষ্টা এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে রাজধানীর সোবহানবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃতের নাম মো. তৌহিদুল ইসলাম শুভ (৩০)। তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা ও গোপন গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে আজ বুধবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে সামরিক পোশাক, ভুয়া আইডি কার্ড, মেজর পদের ভিজিটিং কার্ড, ৮টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিমকার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

কী ঘটেছিল?

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল কোম্পানি লিমিটেড মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানা স্থাপনের জন্য বিভিন্ন সময়ে ১৩৯টি কন্টেইনারে মূল্যবান যন্ত্রপাতি আমদানি করে। কিন্তু যথাসময়ে খালাস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে ৯২ কোটি টাকার মতো স্টোর রেন্ট বকেয়া পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে বসুন্ধরা কোম্পানি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে স্টোর রেন্ট মওকুফের আবেদন করে। তবে আবেদনের নিষ্পত্তির আগেই একটি জাল মওকুফ পত্র ব্যবহার করে চক্রটি যন্ত্রপাতি খালাসের চেষ্টা করে। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে পত্রটি ‘ফেক’ বলে নিশ্চিত করে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সদর থানায় মামলা নং-০৭/২০২৫ রুজু করে। ধারা: ৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯ (পেনাল কোড ১৮৬০)। মামলার তদন্তভার পরে সিআইডির চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো ইউনিটের ওপর ন্যস্ত হয়।

বড় প্রতারক চক্রের মুখোশ উন্মোচন

সিআইডির তদন্তে উঠে আসে যে, চক্রটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন—

  • ফয়েজুর রহমান (৪২) – বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার
  • মোহাম্মদ আবু হানিফা ওরফে হানাফি (৩৩)
  • মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন (৪১)
  • মো. রনি রাজ হোসেন (২৯)

এর মধ্যে হানিফা ও আমিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা বিচারাধীন, রনি রাজের বিরুদ্ধে রয়েছে নারী নির্যাতন ও প্রতারণার মামলা।

মূল অভিযুক্ত তৌহিদুল ইসলাম শুভর বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ২টি মামলা, আরএমপি বোয়ালিয়া থানায় ২টি মামলা এবং একটি সাজা পরোয়ানাসহ মোট ৪টি ওয়ারেন্ট রয়েছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।

তদন্ত অব্যাহত

সিআইডি জানিয়েছে, প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ, বাকি সদস্যদের শনাক্ত এবং গ্রেফতারের জন্য তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে এসেছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন