শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ: ফ্যাক্ট-চেক রিপোর্ট

আহমেদাবাদ, ১২ জুন ২০২৫:

আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি উড্ডয়নের মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় পরিণত হয়। বিমানটি ভারত সরকারের মালিকানাধীন বোয়িং ৭৮৭ মডেলের একটি দীর্ঘপাল্লার যাত্রীবাহী জেট। উড্ডয়নের পরপরই “মে-ডে” সংকেত পাঠানো হয়, এরপর এটি আছড়ে পড়ে আহমেদাবাদের B. J. Medical College ক্যাম্পাসের হোস্টেল ব্লকের ডাইনিং হলে।

ঘটনার বিস্তারিত:

স্থানীয় সময় দুপুর ১:৩৮ মিনিটে বিমানটি আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের লন্ডন। উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি উঁচুতে উঠতে না পেরে আচমকা নিচের দিকে ঢলে পড়ে। মাত্র ৬০০–৭০০ ফুট উচ্চতায় থাকার সময়ই পাইলট “মে-ডে” সংকেত পাঠান।

এরপর বিমানটি BJ মেডিকেল কলেজের হোস্টেল কমপ্লেক্সের ডাইনিং ব্লকের ওপর আছড়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনায় ২৩০ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু মেম্বারের মধ‍্যে ১ জন যাত্রী বাদে সবাই নিহত হন। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।

প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসা সম্ভাব্য কারণসমূহ:

১. ফ্ল্যাপ ও ল্যান্ডিং গিয়ার অপারেশনজনিত ত্রুটি

তদন্তকারীরা মনে করছেন, উড্ডয়নের সময় বিমানের ফ্ল্যাপ সময়ের আগেই রিট্র্যাক্ট করা হয়, এবং ল্যান্ডিং গিয়ার তখনও নামানো ছিল, ফলে প্রয়োজনীয় লিফট (lift) তৈরি হয়নি। এতে করে বিমানটি স্টলে পড়ে যায়—অর্থাৎ, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বায়ু প্রবাহ ও উড্ডয়ন শক্তি হারিয়ে ফেলে।

২. ইঞ্জিন থ্রাস্টে ঘাটতি বা একপাশের ইঞ্জিনের ব্যর্থতা

ইঞ্জিন থ্রাস্টের কোনো একপাক্ষিক হ্রাস বা সম্পূর্ণ ফেইলিওরও ঘটতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। থ্রাস্ট কম থাকলে বিমান দ্রুত উচ্চতা অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং স্থিতি হারিয়ে ফেলে।

৩. উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত ওজনের প্রভাব

সেই সময় আহমেদাবাদের আবহাওয়া ছিল অতি গরম (প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। পাশাপাশি, বিমানে যাত্রী ও মালামালের ওজন অনুমোদিত সীমার কাছাকাছি ছিল বলে জানা গেছে। উচ্চ তাপমাত্রায় বিমানের ইঞ্জিন কার্যক্ষমতা কমে যায়, যা আরও জটিলতা তৈরি করে।

৪. পাইলট বা সিস্টেমিক অপারেশনাল ত্রুটি

Flight Data Recorder-এর প্রাথমিক তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, পাইলট হয়তো অটোমেশন সিস্টেমে নির্ভর করছিলেন এবং ফ্ল্যাপ ও গিয়ারের অনুক্রম (sequencing) নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন। এ ধরনের অনিচ্ছাকৃত মানবিক ভুলও স্টল ট্রিগার করতে পারে।

বোয়িং ৭৮৭ নিয়ে পূর্বের সতর্কতা

এ দুর্ঘটনার পর আবার আলোচনায় এসেছে বোয়িং ৭৮৭ মডেল নিয়ে আগের নিরাপত্তা সংশয়। ২০২৪ সালে একাধিক হুইসেলব্লোয়ার অভিযোগ করেছিলেন যে, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজে কিছু গঠনগত ও নিরাপত্তাজনিত ঘাটতি রয়েছে—বিশেষ করে ফিউজেলাজ ও ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেমে।

তদন্তের বর্তমান অবস্থা:

  • ব্ল্যাক বক্স (Cockpit Voice Recorder এবং Flight Data Recorder) উদ্ধার করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের NTSB ও ভারতীয় DGCA যৌথভাবে বিশ্লেষণ করছে।
  • বোয়িং ও GE Aviation (ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী) তদন্তে অংশ নিয়েছে।
  • বোয়িং ৭৮৭-৮ সিরিজের ভারতের অন্যান্য বিমানে অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা চেক শুরু হয়েছে।

আহমেদাবাদের ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ফ্ল্যাপ ও গিয়ার অপারেশনের ভুল সমন্বয়, ইঞ্জিনের থ্রাস্ট ঘাটতি, এবং উচ্চ তাপমাত্রা ও ওজনজনিত কার্যক্ষমতা হ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, এসব কারণ এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে এবং ব্ল্যাক বক্সের চূড়ান্ত বিশ্লেষণ ছাড়া পূর্ণ সত্য জানা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়-দায়িত্ব ও প্রকৃত কারণ প্রকাশ করা হবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন