শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

এবার খিলক্ষেতে মব করে তল্লাশির নামে নগদ অর্থ-মালামাল লুটপাট

রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে প্রশাসনের পরিচয়ে তল্লাশির নামে মব সৃষ্টি করে একদল দুর্বৃত্ত নগদ টাকা, চেক, সিসিটিভি ডিভাইসসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, হামলাকারীরা মারধরের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে এবং ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ নাম ব্যবহার করে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে গত ১০ জুন বিকেল ৪টার দিকে উত্তর নামাপাড়া বোটঘাট এলাকার ক-২২৮/৬/১ নম্বর বাড়িতে। চাকরিজীবী মোহাম্মদ সহিদুল ইসলামের ফ্ল্যাটে একদল যুবক নিজেদের পুলিশ প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করে এ তাণ্ডব চালায়। ঘটনার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ডাকাতি মামলার আসামি শিমুল। তার নেতৃত্বে মুক্তার, খালেক, ইসমাইলসহ অন্তত ২০ জনের একটি দল অভিযানে অংশ নেয়।

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, মূল ফটক বন্ধ থাকায় দুর্বৃত্তরা পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ টপকে বাড়ির ছাদ দিয়ে প্রবেশ করে। এরপর কলিং বেল বাজালে তারা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘প্রশাসনের লোক’ হিসেবে। দরজা খুলতেই এক আত্মীয়কে বেধড়ক মারধর শুরু করে তারা। ভেতরে থাকা মহিলারা বাধা দিতে গেলে আরও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

ফ্ল্যাটের নিচে আরও ১০-১৫ জন পাহারারত ছিল বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

ভয়ে পরিবারটি ৫ লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়। প্রথমে ঘর থেকে ৫০ হাজার টাকা লুটে নেয় তারা। এরপর স্থানীয় একটি বুথ থেকে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে আরও ৫০ হাজার টাকা তুলে নেয়। একইসঙ্গে প্রাইম ব্যাংকের ৪ লাখ টাকার একটি চেক (নং: ৪৬০৯৬৮৩) লিখিয়ে নেয় তারা। এছাড়া সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আরও লুটপাট চালায়।

তারা ঘরের সিসিটিভি ও ডিভিআর খুলে নিয়ে যাওয়ায় দৃশ্যমান কোনো প্রমাণ না থাকলেও গৃহকর্ত্রী কৌশলে মোবাইলে ১ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওতে অভিযুক্তদের মুখ, পোশাক ও আচরণ স্পষ্ট দেখা যায়।

ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে খিলক্ষেত থানায় ও পূর্বাচল সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ জানানো হয়। মধ্যরাতে থানার এসআই আব্দুল আজিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে ১১ জুন রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।

এসআই আজিজ বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

খিলক্ষেত থানার ওসি কামাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনাটি প্রশাসনের পরিচয়ে অপরাধ সংঘটনের একটি নিন্দনীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন