শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০২৫: অগ্রগতি দৃশ্যমান, কিন্তু পথ এখনো বাকি

আজ, ১২ জুন, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য—“Progress is clear, but there’s more to do”—দুনিয়াজুড়ে চলমান সচেতনতা, নীতি সংস্কার এবং সামাজিক প্রতিশ্রুতির অগ্রগতিকে তুলে ধরলেও সতর্ক করেছে যে এখনও শিশু শ্রম নির্মূলে বহু কাজ বাকি।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউনিসেফের তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন শিশু এখনো নানা রকম শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৪ মিলিয়নের শ্রম-পরিস্থিতি স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ ও শারীরিকভাবে ক্ষতিকর। শিশুশ্রমের বৃহৎ অংশ এখনো কৃষি খাতে, যেখানে কম বয়সেই শিশুদের দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়া গৃহশ্রম, ইটভাটা, কারখানা এবং অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে শিশুদের উপস্থিতি অনেক বেশি।

বিশ্বজুড়ে আইন প্রণয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূলের বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণ হয়নি। আইএলও’র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই হার অব্যাহত থাকলে শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নির্মূলে শত বছর সময় লাগতে পারে। বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকায় ৮৭ মিলিয়নের বেশি শিশু এখনো শ্রমে যুক্ত, যেখানে পরিস্থিতির উন্নতি দৃশ্যত স্থবির।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, শিশুশ্রম বিশেষত কৃষি ও পোশাক খাতে এবং গৃহকর্মে প্রবল। অনেক শিশু এখনো স্কুল থেকে দূরে, এবং তাদের জীবনের শুরুতেই শ্রমের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে শিশু শ্রমের রূপ আরও ভয়াবহ, বিশেষ করে অপ্রকাশ্য গৃহশ্রমের ক্ষেত্রে।

চলতি বছর দিবসটি ঘিরে ইউনিসেফ ও আইএলও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—শিশুদের সুরক্ষায় আইন কার্যকর করতে হবে, দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দিতে হবে এবং সর্বজনীন শিক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। এই লক্ষ্যে জাতীয় বাজেট ও আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন থেকেও।

এই দিনে একটি বিষয় স্পষ্ট—শিশুরা শ্রমের নয়, শিক্ষার অধিকার রাখে। শুধু সচেতনতা নয়, দরকার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সামাজিক অংশগ্রহণ এবং আইন প্রয়োগের কঠোরতা। শিশু শ্রমের অবসান হোক ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভিত্তি হিসেবে, এটিই হোক এবারের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন