বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

স্বপ্নভঙ্গের রাত: সিঙ্গাপুরের কাছে হেরে এশিয়ান কাপের পথে বিপাকে বাংলাদেশ

জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ঘরের মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। চারদিকের উত্তেজনা, টিকিটের জন্য হাহাকার, গ্যালারিতে ২১ হাজার দর্শকের উপস্থিতি—সব মিলিয়ে ১০ জুনের এই ম্যাচটিকে ঘিরে ছিল ব্যতিক্রম এক পরিবেশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সেই স্বপ্নভঙ্গই ঘটল। শক্তিশালী সিঙ্গাপুরের কাছে ২–১ ব্যবধানে হেরে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে কঠিন সমীকরণের মুখে পড়েছে লাল-সবুজরা।

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলকে দেখা গেছে রক্ষণাত্মক মেজাজে। সিঙ্গাপুর ছোট ছোট পাসে আক্রমণ সাজায় এবং বাংলাদেশের রক্ষণভাগে জায়গা খুঁজে পেতে থাকে। প্রথম ৩০ মিনিটেই দুটি নিশ্চিত সুযোগ পায় তারা, যার একটি দক্ষতায় ঠেকান গোলকিপার মিতুল মারমা। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে সেই প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ৪৫তম মিনিটে একটি লম্বা থ্রো থেকে বল বক্সে আসে। গোলরক্ষক মিতুল পাঞ্চ করলেও বল বিপদমুক্ত হয়নি। সেখান থেকে সং উই–ইয়াং-এর শটে এগিয়ে যায় সিঙ্গাপুর।

বিরতির পর ৫৬ মিনিটে আবার গোল হজম করে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরের তারকা স্ট্রাইকার ইখসান ফান্দি বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন। জাতীয় দলের হয়ে এটি ছিল তাঁর ২১তম গোল। তবে গোল খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। ৬৭ মিনিটে হামজা চৌধুরীর নিখুঁত থ্রু পাস ধরে রাকিব হোসেন দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে গোলকিপারের পায়ের নিচ দিয়ে বল জালে পাঠান। এই গোল বাংলাদেশের খেলায় নতুন প্রাণ আনে এবং কোচ একের পর এক পরিবর্তন আনেন দলে।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করলেও কাঙ্ক্ষিত সমতা ফেরাতে পারেনি। শাহরিয়ার ইমনের হেড দুর্দান্তভাবে রক্ষা করেন সিঙ্গাপুরের গোলকিপার। হামজার শট চলে যায় বাইরে, ফাহামিদুলের ড্রাইভ রক্ষণে আটকে যায়, আর এক পর্যায়ে টানা পাঁচটি কর্নার পেয়েও ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে যতই আক্রমণে গতি আসুক, প্রথমার্ধে রক্ষণে গুটিয়ে থাকাই যেন ম্যাচ হারার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ম্যাচটিতে নজর কাড়েন অভিষিক্ত শমিত সোম। মাঝমাঠে চমৎকার কিছু পাস, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চেরা বল এবং খেলার গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় তিনি আলো ছড়িয়েছেন। হামজাও দ্বিতীয়ার্ধে প্রভাব বিস্তার করেন, তবে গোল করার মতো জাদুকরি মুহূর্ত আনতে পারেননি। বিশেষ করে প্রথমার্ধে তাঁকে অনেকটা নিচে নামিয়ে খেলানোয় আক্রমণে প্রভাব পড়েছে। ম্যাচে নাম্বার নাইন স্ট্রাইকারের অভাব ছিল স্পষ্ট, যা গোলসংখ্যায় ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশের কোচ ভুটান ম্যাচের একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনে এই ম্যাচে নামে। রাইটব্যাকে শাকিল তপু, মাঝমাঠে মোহাম্মদ হৃদয় ও শমিত সোম ছিলেন নতুন সংযোজন। কিন্তু রক্ষণভাগে বারবার ফাঁক তৈরি হওয়ায় সিঙ্গাপুর সহজেই গোলের সুযোগ পেয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে খেলায় ফিরলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।

এই হারে গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে জটিলতা বেড়েছে। হংকং ও সিঙ্গাপুর দুটি করে ম্যাচ খেলে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে, ভারত ও বাংলাদেশের অর্জন সমান ১ পয়েন্ট। একইদিনে ভারত ইনজুরি টাইমের পেনাল্টি থেকে হেরে যাওয়ায় গ্রুপে সমীকরণ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পরবর্তী দুটি ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হয়ে থাকল হতাশার প্রতিচ্ছবি। এতদিন পর দেশের ফুটবলে যে আলোড়নের জন্ম হয়েছিল, তা এক রাতে নিভে গেল সিঙ্গাপুরের নির্ভুল আক্রমণে। বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে, সুযোগও পেয়েছে, কিন্তু ম্যাচের ফলাফলে সেই প্রচেষ্টার প্রতিফলন মেলেনি। জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে হারের বাস্তবতায় ফেরা – এই ম্যাচ তাই হয়ে থাকল ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক বেদনাদায়ক স্মৃতি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন