শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতের মণিপুর রাজ্যে উত্তেজনা আবারও চরমে, পাঁচ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ, সহিংসতায় নতুন উদ্বেগ

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে আবারও অস্থিরতা চরমে উঠেছে। সম্প্রতি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘অরম্বাই তেংগল’-এর এক সদস্যকে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (CBI) গ্রেফতার করলে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত পাঁচ জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট এবং ডাটা পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে রাজ্য সরকার।

সহিংসতায় ব‍্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে

CBI-এর অভিযানে ‘অরম্বাই তেংগল’ সংগঠনের এক সদস্যকে সহিংসতার অভিযোগে গ্রেফতারের পর থেকেই ইম্ফলসহ আশপাশের জেলাগুলোতে প্রতিবাদ শুরু হয়। Meitei সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এতে রাজপথে মিছিল, টায়ার পোড়ানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইম্ফল ওয়েস্ট, ইম্ফল ইস্ট, থোবাল, কাকচিং ও বিষ্ণুপুর জেলায় ইন্টারনেট সেবা আগামী পাঁচদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

১৪৪ ধারা জারি করা হয়

রাজ্য সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, “বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ও উত্তেজনাকর ভিডিও ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই পদক্ষেপ জরুরি।”

২০২৩ সাল থেকে রাজ্যে Meitei ও Kuki-Zo সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়। এ পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। সংঘাত এখনও পুরোমাত্রায় থামেনি।

রাষ্ট্রপতি শাসন জারি থাকা মণিপুরে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ চলছে। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা ও আস্থার সংকটই নতুন করে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলছে।

বিরোধী দল কংগ্রেসের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী টুইট করে বলেন, “মণিপুরকে নিয়ে মোদী সরকারের নীরবতা ও ব্যর্থতা অত্যন্ত দুঃখজনক। জাতিগত সহিংসতা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার যৌথ ফল আজকের এই পরিস্থিতি।”

অন্যদিকে Kuki ও Naga সম্প্রদায়ের নেতারা দাবি করছেন, বাফার জোন সংরক্ষণ ও রাজনৈতিক স্বীকৃতি ছাড়া স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক সংলাপ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন ছাড়া এই সংঘাতের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও সামাজিক পুনঃস্থাপনার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

মণিপুরে আবারও সহিংসতা মাথাচাড়া দেওয়ায় রাজ্যজুড়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও রাজনৈতিক সংকট, জাতিগত বিভাজন এবং প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখন দেখার বিষয়—সংঘাত নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিনা।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন