শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাতে ইলন মাস্ক, গড়ছেন ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ৭ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপ ছড়ালেন টেসলা ও এক্স (সাবেক টুইটার)-এর প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদের মধ্যে নিজের রাজনৈতিক দল গঠনের আভাস দিলেন তিনি। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটির নাম ঘোষণা করেছেন মাস্ক—‘দ্য আমেরিকা পার্টি’।

এর আগে বৃহস্পতিবার মাস্ক এক অনলাইন ভোটের আয়োজন করেন, যেখানে অনুসারীদের জিজ্ঞেস করেন, “যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দল কি দরকার?” ভোটে অংশ নেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ তাতে সম্মত হন। এরপর মাস্ক বলেন, “জনতা রায় দিয়েছে। নতুন একটি পার্টি প্রয়োজন যা ৮০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে। এটাই নিয়তি।”

ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্ক: বন্ধুত্ব থেকে সংঘর্ষ

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় মাস্ক প্রায় ২৭ কোটি ডলার অনুদান দেন। নির্বাচনের পর ট্রাম্প তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করেন নতুন একটি দপ্তরের দায়িত্ব দিয়ে—‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (DOEGE)’, যার কাজ ছিল প্রশাসনিক খরচে সাশ্রয় আনা।

কিন্তু মাসখানেক আগে একটি কর ও সরকারি ব্যয় সংশ্লিষ্ট বিল নিয়ে দুইজনের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। ট্রাম্প এই বিলকে বলেন “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট”, আর মাস্ক সেটিকে “জঘন্য” বলে আখ্যা দেন এবং DOEGE থেকে পদত্যাগ করেন।

এরপর থেকে দুইজনের মধ্যে কথার লড়াই আরও তীব্র হয়। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, মাস্ক তাঁর “উপকারভোগী বন্ধু”, আর মাস্ক পাল্টা বলেন, “আমি না থাকলে ট্রাম্প কখনও প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না।”

পাল্টাপাল্টি হুমকি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

ট্রাম্প হুঁশিয়ার করেন যে, টেসলা যেন আর সরকারি ভর্তুকি না পায় এবং আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠানে “নিয়ন্ত্রিত অবরোধ” আরোপেরও ইঙ্গিত দেন। মাস্কও চুপ থাকেননি। তিনি ট্রাম্পের বিলকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “অর্থনৈতিক আত্মঘাত” হিসেবে অভিহিত করেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রস্তাব দেন।

তৃতীয় শক্তি গড়ার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন

মাস্কের নতুন দল গঠনের ঘোষণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিদলীয় ব্যবস্থার মাঝে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জায়গা করে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। এর আগে বিভিন্ন উদারপন্থী বা স্বাধীন প্রার্থী চেষ্টা করেও মূলধারায় জায়গা করে নিতে পারেননি।

তবে প্রযুক্তি জগৎ থেকে উঠে আসা একাধারে উদ্যোক্তা, বিতর্কিত মুখ এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসেবে মাস্কের রাজনৈতিক পদক্ষেপ ভিন্ন মাত্রা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সাময়িকী দ্য হিল বলছে, মাস্কের ঘোষণায় স্পষ্ট রাজনৈতিক অভিপ্রায় থাকলেও এটি বাস্তবায়নের রূপরেখা এখনো অস্পষ্ট। কেউ একে “জনমত যাচাইয়ের নাটকীয় কৌশল”, আবার কেউ বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ধনীদের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রতীক”।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন