শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ওবায়দুল কাদেরের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার: “দেশে ফিরে ভুল স্বীকার ও ক্ষমার কথা ভাববো”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

জুলাইয়ের রাজনৈতিক পালাবদলের পর দীর্ঘ আত্মগোপন ও দেশত্যাগের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে তিনি নিজ দেশেই ভুল স্বীকার বা অনুশোচনার প্রশ্নে অবস্থান নেবেন।

বর্তমানে কলকাতায় অবস্থানরত কাদের বলেন, “দেশের মাটিতে ফিরে যখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবো, তখনই যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তা নিয়ে অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার বিষয় আসবে। দেশের বাইরে থেকে এসব বলা অর্থবহ হবে না।”

ওবায়দুল কাদের জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট ‘গণ-অভ্যুত্থান’-এর দিন তিনি সংসদ ভবন এলাকা ছেড়ে অন্য একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে স্ত্রীসহ অবস্থানকালে সেই বাসাও আক্রান্ত হয়, ফলে তাকে বাথরুমে লুকিয়ে থাকতে হয়। তিনি বলেন, “আমি এক পর্যায়ে অনন্যোপায় হয়ে বাথরুমে আশ্রয় নিই। পরে আন্দোলনকারীদের হাতে পড়ে গেলেও তারা আমাকে আঘাত করেনি, বরং শার্ট বদলে ও মুখে মাস্ক দিয়ে নিরাপদে সরিয়ে দেয়।”

তার ভাষায়, “তারা বলল, আমার চাচা-চাচি অসুস্থ, হাসপাতালে নিতে হচ্ছে—এই কথা বলে আমাদের ভিড় থেকে সরিয়ে নিল। সেই রাতে আমি বুঝলাম, এই তরুণদের মাঝে এখনো মানবিকতা বেঁচে আছে।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনকে তিনি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন’ বললেও, এর মধ্যে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান’ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে স্বীকার করেন, ছাত্রদের ভেতরেও নিজেদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি দাবি করেন, তার দেশত্যাগ পূর্বপরিকল্পিত ছিল না, বরং আত্মরক্ষার জন্য তিনি ধাপে ধাপে বাসা বদল করে এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

৫ আগস্টের আগের দিন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, তারা পরিস্থিতির আঁচ পেয়েছিলেন, কিন্তু সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পুরো বাস্তবতা যথাযথভাবে বুঝিয়ে উঠতে পারেনি।

বাহিনীগুলো আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত হয়েছে—এমন প্রশ্নে কাদের দায় চাপান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর। তিনি বলেন, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে। আমরা শুধু আমাদের দলকে সংগঠিত থাকতে বলেছিলাম।”

সেনাবাহিনীর প্রকাশিত আশ্রয়প্রাপ্তদের তালিকায় নিজের নাম না থাকায় কাদের বলেন, “আমি কোনো সেনানিবাসে আশ্রয় নিইনি। প্রথম দুই দিন কয়েকবার বাসা বদল করেছি। ক্যান্টনমেন্টে যাওয়ার ভাবনা আমার মাথায় আসেনি।”

তিনি দাবি করেন, দেশ ছাড়ার আগে বা পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনকি শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ হয়নি। “আমাকে ধরতে তল্লাশি চলছিল, সেই মুহূর্তে আমার একটাই চিন্তা ছিল—ধরা না পড়া,” বলেন কাদের।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে দলের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ ও নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্নে কাদের বলেন, “ভুল হলে, তার দায় স্বীকার করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে আমরা পিছপা হবো না। তবে সেটা হতে হবে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। বিদেশ থেকে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন