শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

তাসরিফ লঞ্চের রুট পাল্টে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা

মনপুরা-হাতিয়া যাত্রায় বিড়ম্বনা, অভিযোগে সাড়া দেয়নি কর্তৃপক্ষ

পবিত্র ঈদুল আজহার প্রাক্কালে যাত্রীদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছে এমভি তাসরিফ-১ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঢাকা থেকে মনপুরা ও হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, যাত্রীদের সারারাত অপেক্ষায় রেখে সকালে তারা ঘোষণা দেয়, লঞ্চটি ভিন্ন রুটে চরফ্যাশন যাবে। এতে করে শত শত যাত্রীর ঈদযাত্রা ভেঙে পড়ে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাসরিফ-১ লঞ্চটি সদরঘাট থেকে মনপুরা-হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা ছিল। এই অনুযায়ী যাত্রীরা দূরদূরান্ত থেকে এসে সদরঘাটে হাজির হন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও লঞ্চটি ঘাটে ভিড়েনি। রাত সাড়ে ৮টায় জানানো হয়, শুক্রবার সকাল সকাল লঞ্চটি ছেড়ে যাবে। যাত্রীরা টার্মিনালেই রাত কাটান।

কিন্তু ভোরে হঠাৎ করেই আবার ঘোষণা আসে—লঞ্চটি মনপুরা বা হাতিয়া নয়, বরং চরফ্যাশন যাবে। এতে হতবাক হয়ে পড়েন শতাধিক যাত্রী।

আশুলিয়া থেকে আসা যাত্রী রানা জানান, তিনি দুই সপ্তাহ আগে কেবিন বুক করেছিলেন। তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে দুপুর ৩টায় ঘাটে আসেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ না আসায় সারারাত অপেক্ষা করেন। রাতেও লঞ্চ ঘাটে না আসায় পরিবার নিয়ে টার্মিনালেই রাত কাটাতে হয়। ভোরে জানতে পারেন—রুট বদলানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, এটি নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও ঈদে তাসরিফ লঞ্চ এ ধরনের কৌশলে রুট বদলে যাত্রীদের হয়রানি করেছে।

গাজীপুর থেকে আগত এক নারী গার্মেন্টকর্মী জানান, “চরম কষ্ট করে এসেছি ঘাটে। রাতে আর কোনো লঞ্চ পাইনি। ভেবেছিলাম অন্তত সকালেই যেতে পারব। এখন জানাচ্ছে—লঞ্চ মনপুরা যাবে না!”

এ বিষয়ে নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের জানালেও কোনো কার্যকর প্রতিকার মেলেনি বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

লঞ্চের কেবিন সুপারভাইজার আরিফ তালুকদার প্রথমে জানান, ইঞ্জিন সমস্যার কারণে বিলম্ব হচ্ছে। পরে আবার জানান, লঞ্চটি চরফ্যাশনে যাবে এবং তা মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি সাংবাদিকের ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোবারক বলেন, “নৌ পুলিশ রাত ৮টার দিকে বিষয়টি জানায়। তখন জানতে চাইলে তারা বলেছে ইঞ্জিন সমস্যা হয়েছে। রাতেই যাত্রীদের ফারহান লঞ্চে করে যাওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু যদি পরে রুট বদলায়, সেটা দুঃখজনক।”

তিনি আরও বলেন, “যদি যাত্রীরা লিখিত অভিযোগ দেন বা আমরা যথাযথ প্রমাণ পাই, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান

বারবার যাত্রীদের হয়রানি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাসরিফ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এর নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা—যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন হয়রানির শিকার না হন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন