বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ঈদের পরই সংকটে থাকা পাঁচ ইসলামি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হবে নতুন বৃহৎ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক

ঢাকা, ৪ জুন ২০২৫

ঈদুল আজহার ছুটির পরই অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠন করতে যাচ্ছে একটি বৃহৎ ইসলামি ব্যাংক। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর সম্পদ, আমানত এবং জনবল স্থানান্তরের মাধ্যমে নতুন একটি ইসলামী ধারার শক্তিশালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার প্রাথমিক মূলধন জোগাবে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি)। নতুন ব্যাংকটির প্রাথমিক লক্ষ্য হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (এসএমই) অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা।

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক:

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
  • ইউনিয়ন ব্যাংক
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • এক্সিম ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এসব ব্যাংকের একীভূতকরণের পর গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। গ্রাহকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকের অধীনে চলে আসবেন। লেনদেন, হিসাব নম্বর ও চুক্তিপত্র অপরিবর্তিত থাকবে। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের (চেয়ারম্যান ও এমডি) বাইরে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবেন।

বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট:

গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকগুলোর পরিচালনায় পরিবর্তন আনা হয়। এক্সিম ব্যাংক বাদে বাকি চারটিতে নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ পাঁচ ব্যাংকের অধীনে রয়েছে ৭৭৯টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫০০ এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ১,০০০টি এটিএম বুথ। ১৫ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ৯২ লাখ গ্রাহকের প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা—যার বড় একটি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ ও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত।

বিশেষভাবে, এস আলম গ্রুপ ও নজরুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঋণগুলো আদায়যোগ্য নয় বলেই চিহ্নিত হয়েছে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সামাল দেওয়া এবং সুশাসন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নতুন সম্ভাবনা না পুরনো সংকট?

ব্যাংকাররা মনে করছেন, বৃহৎ ইসলামি ব্যাংক গঠনের মাধ্যমে দেশের ইসলামিক ব্যাংকিং খাতে নতুন একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হতে পারে। তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন, যদি সুশাসন ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে কেবল ব্যাংক একীভূত করেই সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ার পূর্ণ বাস্তবায়নে সময় লাগবে প্রায় তিন বছর। তবে ব্যাংক খাতকে ঝুঁকিমুক্ত ও সক্ষম করতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখানে গ্রাহকদের জন্য জরুরি বার্তা:

বর্তমানে যেসব গ্রাহক উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর সেবা নিচ্ছেন, তাঁদের লেনদেন, হিসাব নম্বর কিংবা জমা অর্থের কোনো পরিবর্তন বা ঝুঁকি নেই। একীভূতকরণের প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও সুরক্ষিতভাবে সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন