শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৫–২৬ বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত ও অংশগ্রহণহীন: বিএনপির প্রতিক্রিয়া

২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত, অংশগ্রহণহীন এবং জনস্বার্থ উপেক্ষিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে জাতি একটি ন্যায্য, অংশগ্রহণমূলক ও বৈষম্যহীন বাজেট প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট সেই প্রত্যাশাকে চরমভাবে ব্যর্থ করেছে।”

বিএনপির অভিযোগ, বাজেট ঘোষণায় মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং স্বাধীন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ অনুযায়ী দেশের দরিদ্র মানুষের প্রকৃত আয় ২০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। তেল, চাল, ডাল, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গিয়েছে। অথচ বাজেটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় বাস্তবভিত্তিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা সংকুচিত হয়েছে এবং ভাতার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, “এই বাজেট জনবিচ্ছিন্ন ও সুবিধাভোগী শ্রেণির হাতে প্রণীত। এতে তরুণদের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেই, কৃষক বঞ্চিত, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা নেই এবং তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে পেছনে ঠেলে ফ্রিল্যান্সারদের ওপর নতুন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে।”

বিএনপি আরও অভিযোগ করে, বাজেট তৈরিতে কোনো ধরনের জাতীয় সংলাপ হয়নি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও তাতে বৈচিত্র্য বা সংস্কারের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বরং গতানুগতিক ধারার অনুসরণে এটি রূপ নিয়েছে রাজনৈতিক মিত্রদের খুশি রাখার ব্যালেন্স শিটে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে জনগণের জন্য একটি বিকল্প ১৮০ দিনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। এতে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী উন্নয়ন, শিল্পবিনিয়োগ, আইসিটি এবং প্রবাসী কল্যাণসহ দশটি খাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। তারা দাবি করেন, “এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ছয় মাসেই অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা সম্ভব।”

বিএনপির পরিকল্পনায় রয়েছে, জাতীয় বাজেট প্রণয়নে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা, পুঁজিবাজার ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, SME উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহমূলক প্যাকেজ ঘোষণা এবং প্রযুক্তিনির্ভর কর-পরিশোধ পদ্ধতি চালু। তারা বলেন, বাজেটের আকার বড় করা নয়, বরং অর্থের প্রভাবশালী ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারই এখন সময়ের দাবি।

বিএনপি এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি জনকল্যাণমুখী, অংশগ্রহণভিত্তিক বাজেট আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেন, “বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন রাষ্ট্রনীতি এবং নতুন আর্থিক পরিকল্পনার প্রয়োজন।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন