শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারত পুশইন কৌশলে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়: কাদের গনি চৌধুরী


বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে বাংলাভাষী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে নাগরিকদের ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন লঙ্ঘনের সামিল।

মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘অবৈধ পুশইন ও সার্বভৌমত্ববিরোধী করিডোর প্রদান বন্ধের দাবি’ শীর্ষক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম জিয়াউল হাসান, কর্নেল (অব.) খন্দকার ফরিদুল আকবর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মফিজুর রহমান, অধ্যাপক এম শাহজান সাজু ও ড. নাসির আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মোস্তফা আল ইযায।

কাদের গনি বলেন, সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির বৈঠক হলেও কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। বরং চোরাপথে কিংবা সীমান্ত রক্ষীদের অগোচরে অব্যাহতভাবে পুশইন চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। বিজিবি বারবার প্রতিবাদ জানালেও তা আমলে নিচ্ছে না ভারত সরকার। এই ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ওপর হামলা চালিয়ে জাতীয় পতাকা অবমাননা ও কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনাকে তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘চরম মাত্রার উসকানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, অতীতে ২০০২-০৩ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এই ধরনের পুশইনের নজির ছিল। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তা বন্ধ হয়। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর ফের ভারত পুশইন শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো নাগরিক যদি অবৈধভাবে অন্য দেশে অনুপ্রবেশ করে, তবে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য কূটনৈতিক ও আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু ভারত সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে একতরফাভাবে জোর করে মানুষ ঠেলে দিচ্ছে। এ ছাড়া সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা, মাদক চোরাচালান ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরির পথ নিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এ সময় তিনি ভারতের গণমাধ্যমের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করছে তারা, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর’ প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে কাদের গনি বলেন, “এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।”

আলোচনায় বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন বলেন, “সীমান্তে ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। পুশইনের জবাব হবে ‘পুশব্যাক’। এ বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।”

প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, “আইনবহির্ভূতভাবে পুশইন চালিয়ে যাচ্ছে ভারত, যা আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশী সম্পর্কের বিরোধী। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্বার্থে ভারতকে এই কার্যক্রম থেকে সরে আসতে হবে।”


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন