শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

শরীয়তপুর-২ আসনে জমে উঠেছে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা, মাঠে বিএনপি, বিকল্পধারা, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী রাজনৈতিক নেতাদের তৎপরতা ও প্রচারণা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। মূলত বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা, বিকল্পধারার এক আলোচিত মুখ, জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী এবং জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার প্রতিযোগিতা

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফিকুর রহমান কিরন এবং জেলা সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নেতা কর্ণেল (অব.) এসএম ফয়সাল আহমেদ দলীয় মনোনয়ন পেতে শক্তিশালী প্রচার-তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দলীয় সভা-সমাবেশে অংশ নেওয়া, সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা, এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা এবং ঢাকায় দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ—সব দিক থেকেই তাঁরা সমানভাবে সক্রিয়।

শফিকুর রহমান কিরন বলেন, “আমাদের দলে গ্রুপিং নেই, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। দলের প্রতি আমার দীর্ঘদিনের অবদান মূল্যায়ন করলে মনোনয়ন আমি পাবো।”

অন্যদিকে কর্নেল (অব.) ফয়সাল বলেন, “বিগত দিনের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী।”

তাঁর সমর্থক জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মোমিন দিদার বলেন, “আমাদের নেতার কোনো বিতর্কিত সম্পর্ক নেই, মনোনয়ন নিশ্চয়তা নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি।”

বিকল্পধারার আলোচিত মুখ বুলু

এফবিসিসিআইয়ের জেনারেল বডির সদস্য এবং টেলিকম খাতে নিয়মিত ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা আমিনুল ইসলাম বুলু বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন।

জনগণের জিবি/মিনিটের মেয়াদ আনলিমিটেড করার দাবি তুলে ধরা ও বিটিআরসি সেমিনারে আলোচিত বক্তব্যের কারণে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাওয়া বুলু বলেন, “শরীয়তপুর-২ তেমন উন্নয়ন হয়নি। মানুষ পরিবর্তন চায়। নতুন নেতৃত্ব চায়। সেই পরিবর্তনের জন্য আমি রাজনীতিতে এসেছি।”

তিনি বলেন, “বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বিকল্পধারা একটি গণমুখী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। আমি সে দলের একজন সক্রিয় কর্মী হতে চাই।”

জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত, সক্রিয় রয়েছেন অন্যান্য দলও

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসাইন দলীয়ভাবে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দলে লবিং-তদবিরের সংস্কৃতি নেই। দল আমাকে মনোনীত করেছে, আমি এলাকার জন্য কাজ করছি।”

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ম ম ওয়াসিম খোকন ইতোমধ্যে এলাকায় তৎপর হয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য দুই প্রার্থী অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া সরদার ও মাওলানা শওকত আলী মসজিদভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।

আসনের প্রেক্ষাপট

নড়িয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনটি ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও, এখানে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও জামায়াত একাধিকবার শক্ত অবস্থান দেখিয়েছে।

১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল হক হাওলাদার নির্বাচিত হলেও আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকে এই আসন বহুবার দলীয় পালাবদলের সাক্ষী হয়েছে। শওকত আলী একাধিকবার এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।

শেষ কথা

শরীয়তপুর-২ আসনে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা বাড়ছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা, বিকল্পধারার নতুন মুখ, জামায়াতের স্থির অবস্থান এবং অন্যান্য দলের মৃদু তৎপরতা এই আসনটিকে একটি বহু-মেরুকেন্দ্রিক নির্বাচনী মাঠে পরিণত করেছে।

নির্বাচনী হাওয়া এখনো পূর্ণভাবে না জমলেও—প্রার্থী, প্রচার এবং প্রচেষ্টা—সব মিলিয়ে শরীয়তপুর-২ আসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নজরকাড়া লড়াইয়ের মঞ্চে রূপ নিচ্ছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন