শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জগন্নাথের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে অনড় অবস্থান, আজ থেকে গণ–অনশন

রাজধানীর ব্যস্ততম কাকরাইল মোড়ে গত দুই দিন ধরে এক ব্যতিক্রমধর্মী দৃশ্যের সাক্ষী হচ্ছে পথচারী ও যাত্রী সাধারণ। রাস্তায় বসে শত শত ছাত্র-শিক্ষক, তাঁদের মুখে দৃঢ় প্রত্যয়—দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা উঠবেন না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিন ধরে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি প্রতিনিধি এসে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। ফলে আন্দোলনকারীরা আজ শুক্রবার (১৬ মে) গণ–অনশন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বড় পরিসরে সমাবেশ হবে, এবং জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে গণ–অনশনে বসবেন।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট:

সবকিছু শুরু হয় গত বুধবার দুপুরে, যখন শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে লংমার্চ শুরু করেন। কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে। এতে শিক্ষকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।

এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেন। কেউ ব্যানার হাতে, কেউ চটের বস্তা বিছিয়ে বসে রয়েছেন সেখানে। সড়কে কেউ শুয়ে আছেন, কেউ খালি পেটে প্রতিবাদ করছেন। আন্দোলনে নতুন করে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-স্টাফরাও।

দাবিগুলো কী?

আন্দোলনকারীরা যে তিনটি দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সেগুলো হলো:
১. ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি কার্যকর করা (২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে)
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন করা—কোনো কাটছাঁট নয়
৩. দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু

যানজটে ভোগান্তি:

এই আন্দোলনের কারণে কাকরাইল, পল্টন, শাহবাগ, মালিবাগ, বাংলামোটরসহ আশপাশের এলাকায় গত দুই দিন ধরেই তীব্র যানজট চলছে।


ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার পর থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি। অফিস টাইমে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হন কর্মজীবীরা।

সরকারের প্রতিক্রিয়া:

বুধবার রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থীদের উষ্মা দেখা দেয়। তাঁকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হোসাইন নামে একজনকে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁকে আটক করতে অভিযান চলছে।

তবে বৃহস্পতিবার (গতকাল) সরকার পক্ষ থেকে কেউ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেননি।

আন্দোলনকারীদের বার্তা:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন বলেন—
“সরকার এখনো আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি। আমরা এখান থেকে উঠব না, প্রয়োজনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবস্থান করব।”

একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী জামালপুর থেকে এসে বলেন, “জগন্নাথের ওপর এমন হামলা হয়েছে, ঘরে বসে থাকতে পারিনি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, কিন্তু আমাদের ওপর গুলি, লাঠিচার্জ কেন?”

আজকের কর্মসূচি:

  • সকাল ১০টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বৃহৎ সমাবেশ
  • জুমার নামাজের পর গণ–অনশন শুরু
  • দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ ও কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে

গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত আন্দোলন স্থলে ছাত্র-শিক্ষকরা অবস্থান করছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায়, আজকের অনশন কর্মসূচি জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন