শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১১৪, শিশু ও নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য

গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীরা। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহরে রাতভর বাড়ি ও ত্রাণশিবির লক্ষ্য করে চালানো বোমাবর্ষণে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছে বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাস ও প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

এদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও নামাজঘরে চালানো হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-শাসিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খান ইউনুসের রাস্তায় নিহতদের জানাজা ও শোকাবহ দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। শহরের প্রধান হাসপাতালের মর্গে জায়গার অভাবে মরদেহ করিডোরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।

স্থানীয় বাসিন্দা ও এক সন্তানের জননী সাফা আল-বায়উক জানান, তাঁর ছয় সপ্তাহ বয়সী সন্তান মুআত এবং এক বছর চার মাস বয়সী সন্তান মোয়াতাজ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে। “রাতটা ছিল স্বাভাবিক। খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছিলাম, এরপর সব ওলট-পালট হয়ে যায়,” বলেন তিনি।

১৩ বছর বয়সী রীম আল-জানাতি বলেন, তাঁর মামার পরিবার বোমায় পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। “আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেদের বের করতে আমরা নিজেরাই চেষ্টা করি,” বলেন তিনি।

এদিকে জাবালিয়া শহরের শিহাব পরিবারের ৫ জন সদস্য, আল-ফাখুরি এলাকার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও নামাজঘরে ১৩ জন, এবং বেইত লাহিয়া ও দেইর আল-বালাহ এলাকায় আরও ৬ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স।

হামলায় নিহত হয়েছেন আল-আকসা রেডিওর স্থানীয় সাংবাদিক হাসান সামুর এবং তাঁর পরিবারের ১১ জন সদস্য।

এর আগের দিন বুধবারও গাজাজুড়ে চালানো ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৫৯ জন জাবালিয়ায়।

ইসরায়েল দাবি করেছে, রিমাল এলাকার একটি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কয়েকটি স্কুল “সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি” হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং সেখানে শিগগিরই “তীব্র হামলা” চালানো হবে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংগঠন গাজায় বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। তবে জাতিসংঘ এ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, এটিকে মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে।

ইসরায়েল ২ মার্চ গাজায় অবরোধ আরোপ করে এবং দুই সপ্তাহ পর হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় হামলা শুরু করে।

হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩,০১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইসরায়েলি নতুন আক্রমণ শুরুর পর নিহত হয়েছেন ২,৮৭৬ জন।

ইসরায়েল বলছে, হামাসের হাতে থাকা ৫৮ জন জিম্মি মুক্ত করতে চাপ প্রয়োগ করতেই এই অভিযান। তবে মানবিক সংস্থাগুলো অবরোধের কারণে গাজার ২১ লাখ মানুষের মধ্যে চরম দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন