বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

শিশুদের সুস্থতা গঠনে ছোট অভ্যাস, বড় সুরক্ষা

শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা একটি জাতির অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু অনেক সময়ই ছোট ছোট ভুলের কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ—সব জায়গায় শিশুদের সুস্থতার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

বেশিরভাগ বাবা-মা ভাবেন শিশু খাচ্ছে মানেই সে সুস্থ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিশু কী খাচ্ছে তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয় থাকলে মোটা হয়ে যাওয়া, দাঁতের সমস্যা, এমনকি অল্প বয়সে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাই দৈনিক খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, ডিম, দুধ ও বাদাম অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। খাবারের রঙ বা গন্ধ নয়, উপকারিতা বুঝে খাওয়াতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ৬০% ছেলেমেয়ে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত না ধোয়ার কারণে বছরে একাধিকবার ডায়রিয়া বা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। খাবারের আগে-পরে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া, নখ ছোট রাখা ও ব্যক্তিগত জিনিস শেয়ার না করার মতো সহজ অভ্যাসগুলো শিশুদের শেখাতে হবে।

শিশুরা ঘুমের সময় হরমোন নিঃসরণ ও মানসিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। প্রতি রাতে বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়, মনোযোগ কমে এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। ৩–৫ বছর বয়সী শিশুর দিনে ১০–১৩ ঘণ্টা, ৬–১২ বছর বয়সী শিশুর ৯–১১ ঘণ্টা এবং ১৩–১৮ বছর বয়সীদের জন্য ৮–১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

শিশুর সুস্থতায় টিকাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম অনুযায়ী, ০-১৫ মাসের মধ্যে ১২টি টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক। ভুলে গেলে বা দেরি হলে ঝুঁকি থেকেই যায়।

সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি থেকে মনোযোগহীনতা, রাগ, নিদ্রাহীনতা ও ভাষাগত সমস্যাও তৈরি হতে পারে। মোবাইলের পরিবর্তে গল্পের বই, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কনের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদের শিশুদের সাথে সময় কাটাতে উৎসাহিত হতে হবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, একটি সুস্থ শিশুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—নিয়মিত খাওয়া ও ঘুম, শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মানসিক স্থিতিশীলতা, সময়মতো টিকা গ্রহণ এবং পরিমিত প্রযুক্তি ব্যবহার। ছোট ছোট অভ্যাস থেকেই গড়ে ওঠে বড় সচেতনতা, আর সেখানেই নিহিত ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন