শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জুলাই গণহত্যায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হতে যাচ্ছে

ঢাকা, ১২ মে ২০২৫:
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সোমবার (১২ মে) দুপুরে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে। এই অভিযোগে তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর পরবর্তী ধাপে ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।” এর আগে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, চানখারপুল হত্যাকাণ্ডে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শেষ হয়েছে এবং চলতি সপ্তাহেই তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (formal charge) গঠন করা হবে।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলার তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, এই নির্দেশ দেন। এর আগে, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া আরেক মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ৪৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশব্যাপী চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে গুলিবর্ষণ চালানো হয়। ওই হামলাগুলোর নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও অনুমোদনের অভিযোগ শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উঠেছে।

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। পরবর্তীতে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় এবং গণহত্যার বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনরায় সক্রিয় করা হয়।

এই মামলাটিকে বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করছেন, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন