বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

সংগীত গবেষণার বাতিঘর মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই

বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। শনিবার সকাল ৭টায় রাজধানীর বনানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কন্যা শারমিন আব্বাসী। বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আব্বাসউদ্দিন আহমেদ ছিলেন বাংলার পল্লীগীতির কিংবদন্তি শিল্পী। চাচা আবদুল করিম ছিলেন ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। তাঁর বোন ফেরদৌসী রহমান, ভাতিজি নাশিদ কামাল এবং বড় ভাই বিচারপতি মোস্তফা কামালের পরিবারও সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতায় অনন্য অবদান রেখে গেছে।

১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। শৈশব-কৈশোর কলকাতায় কাটানোর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬০ সালে এমএ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে মার্কেটিংয়ে উচ্চশিক্ষা নেন হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে। কর্মজীবনে ছিলেন শিল্পগোষ্ঠীর মহাব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের দীর্ঘদিনের পরিচালক।

তিনি লোকসংগীত নিয়ে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। বাংলার ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, বিচ্ছেদী, চটকা ইত্যাদি গান সংগ্রহ করে স্বরলিপিসহ সংরক্ষণ করেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ভাওয়াইয়ার জন্মভূমিভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালিলোকসংগীতের ইতিহাসদুয়ারে আইসাছে পালকিস্বাধীনতা দিনের গান ইত্যাদি। জার্নাল অব ফোক মিউজিক সাময়িকীর সম্পাদক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত ছিলেন।

তিনি প্রায় ২৫টি দেশে বাংলাদেশের লোকসংগীত পরিবেশন করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনসহ ইউনেস্কো, রুমি সম্মেলন, সুফি সম্মেলন এবং এশিয়া মিডিয়া সামিটে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করেন। ইউনেস্কোর বাংলাদেশ মিউজিক কমিটির সভাপতি হিসেবে ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী জীবদ্দশায় ২১টি গ্রন্থ রচনা করেন এবং বহু সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন। তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, লালন পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।

তাঁর মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সংগীতসাধনার এক অনন্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। মরহুমের জানাজা ও দাফনসংক্রান্ত বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন