শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১২, মানবিক সহায়তা বন্ধ: দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে অবরুদ্ধ জনপদ

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় আরও অন্তত ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০০ জনেরও বেশি মানুষের। বৃহস্পতিবার দেইর আল-বালাহ ও নুসাইরাত শরনার্থী ক্যাম্পে পৃথক হামলায় ৩ জন নিহত হয়। শুজাইয়ায় গোলাবর্ষণে প্রাণ হারান একজন এবং আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। গাজার উত্তরে বেইত লাহিয়ায় একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় মারা গেছেন আরও পাঁচজন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা আরও একজন নারীর সন্ধানে চলছে উদ্ধার অভিযান।

আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, যে বাড়িতে হামলা হয়েছে সেটি গৃহহীন মানুষদের আশ্রয়স্থল ছিল। হামলায় বাড়ির মালিক ও তার আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা নিহত হন। দগ্ধ ও গুরুতর আহতদের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে নেওয়া হয়, যা ইতিমধ্যেই সেবার সীমায় পৌঁছে গেছে। এক পরিবারেই নিহত হয়েছে ৯ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশুরাও। অনেকে এখনও নিখোঁজ।

খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া টেন্টে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে এক কিশোরী নিহত এবং আরও চারজন আহত হন। এই সময়েই গাজার খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলের অবরোধে গাজায় সহায়তা সামগ্রী প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক কমিউনিটি রান্নাঘর। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন’ (WCK) জানায়, তারা আর কোনো খাবার প্রস্তুত করতে পারছে না। মজুদকৃত ময়দা ও অন্যান্য উপাদান ফুরিয়ে গেছে। তারা প্রতিদিন অন্তত ১.৩ লাখ খাবার এবং ৮০ হাজার রুটি সরবরাহ করত, যা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ।

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামও জানায়, গাজায় তাদের খাদ্য মজুত শেষ হয়ে গেছে, যার ফলে লাখো মানুষের জন্য সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেড়েছে, এবং চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অবরোধকে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে এটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে।

এদিকে গাজার বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইরান যদি হামাস ও হিজবুল্লাহকে সমর্থন করে, তবে তেহরানকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। এই হুমকি এসেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের এক ড্রোন হামলার পর, যা ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হানে। ওই হামলায় ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পাল্টা জবাবে ইসরায়েল হুথি নিয়ন্ত্রিত সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা চালায়, যাতে একজন নিহত ও বহু লোক আহত হন।

হুথিরা এই হামলাকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে চালানো দাবি করলেও ইরান এই হামলার দায় অস্বীকার করেছে। হুথি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে বলেন, তারা আরও হামলা চালাবে এবং লক্ষ্য হবে ইসরায়েল ও তাদের জাহাজ।

গাজা এখন একসঙ্গে সহিংসতা, অনাহার, চিকিৎসাহীনতা ও রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। ত্রাণ, খাদ্য ও পানির জন্য মানুষ জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করছে, আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এই সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন