শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সচিবালয়ে আজ তালা ঝোলানোর কর্মসূচি: সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশের প্রতিবাদে কর্মচারীদের আন্দোলন অব্যাহত

চার অপরাধে চাকরিচ্যুতির বিধানসহ গেজেট প্রকাশ, দাবি না মানলে লাগাতার কর্মসূচির হুমকি

ঢাকা | ২৬ মে ২০২৫

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর প্রতিবাদে আজ সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে তালা ঝোলানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, সরকারের ‘নিবর্তনমূলক আইন’ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।

এর আগে গতকাল রোববার সচিবালয়ের ভেতরে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভে অংশ নেন। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এই আন্দোলন চলছে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো। বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের পর থেকেই কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সরব হন।

গেজেট প্রকাশ: কার্যকর হলো নতুন বিধান

বিক্ষোভের মধ্যেই রোববার সন্ধ্যায় সরকার ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর গেজেট প্রকাশ করে। এতে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৭-এর পর ‘৩৭(ক)’ নামে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় চারটি অপরাধ এবং তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যার আওতায় দ্রুত সময়ে কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতিও সম্ভব।

উল্লেখযোগ্য অপরাধসমূহ:

১. এমন কর্মকাণ্ড, যাতে অন্য কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়

২. ছুটির অনুমতি ছাড়া অথবা যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকা

৩. অন্য কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে বা কর্মবিরতিতে উসকানি দেওয়া

৪. কর্তব্য পালনে ইচ্ছাকৃত অবহেলা বা বাধা সৃষ্টি

শাস্তির ধরন:

  • বরখাস্ত
  • চাকরি থেকে অব্যাহতি
  • পদাবনতি বা বেতন হ্রাস

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই অধ্যাদেশ মূলত ১৯৭৯ সালের ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ’ পুনরায় কার্যকর করেছে, যা চাকরিজীবীদের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

দাবি-দাওয়া পর্যালোচনায় স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন

আন্দোলনের মধ্যেই সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনার জন্য একটি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

কমিটির সভাপতি করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জনপ্রশাসনের যুগ্ম সচিব (সচিবালয় ও কল্যাণ অধিশাখা)।

কমিটি প্রতি মাসে একবার বৈঠকে মিলিত হবে এবং প্রয়োজনে কর্মচারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। যৌক্তিক দাবিগুলো বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করবে সরকারকে।

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আজকের তালা ঝোলানো কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা সরকারের প্রতি নিজেদের বার্তা পৌঁছাতে চান। পরিস্থিতি শান্ত না হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরকারি মহলে ইতিমধ্যেই আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিক সংলাপের পথে এগোয়নি। পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন