শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

চার অপরাধে চাকরিচ্যুতির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি—সচিবালয়ে উত্তেজনা, বিক্ষোভ

সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে চারটি নির্দিষ্ট অপরাধে সরাসরি চাকরিচ্যুতির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ জারি করেন।

তবে এ অধ্যাদেশকে ঘিরে সচিবালয়জুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিক্ষোভ। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটিকে ‘নিবর্তনমূলক কালাকানুন’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাদেশের মূল বিধান

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মচারী যদি—

১. এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হন যাতে অন্য কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়,

২. ছুটি ছাড়া বা যৌক্তিক কারণ ব্যতিরেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন,

৩. অন্য কোনো কর্মচারীকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে উসকানি বা প্ররোচনা দেন,

৪. বা অন্যকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেন—

তাহলে তিনি ‘অসদাচরণে’ অভিযুক্ত হবেন এবং তার বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতি সহ দণ্ড কার্যকর করা যাবে।

প্রেক্ষাপট: আন্দোলন ও প্রতিবাদ

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদিত হলে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর জানান, “এই আইন শুধু আমাদের অধিকার খর্বই করছে না, বরং ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান অসাংবিধানিক ও অমানবিক।”

তিনি আরও জানান, দাবি না মানা পর্যন্ত সচিবালয়ের কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা বহাল থাকবে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

পরিস্থিতি ও সরকারের অবস্থান

বিজ্ঞাপন

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “চাকরির শৃঙ্খলা এবং দায়িত্বশীলতা বজায় রাখতে এই অধ্যাদেশ সময়োপযোগী। তবে এর প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।”

বিজ্ঞাপন

বিশ্লেষকদের মতে, দেশে যখন অন্তর্বর্তী সরকার চলছে এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে, ঠিক সেই সময় এ ধরনের অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত প্রশাসনের ভেতরে দ্বন্দ্ব বাড়াতে পারে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অভিমত

সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মনে করেন, “প্রশাসনের অভ্যন্তরে এমন কঠোর শৃঙ্খলাবিধি প্রয়োগের আগে সমন্বিত পর্যালোচনা ও আলোচনা প্রয়োজন ছিল। এই আইন সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারে, যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও মানবিকতা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”

চলমান পরিস্থিতির দিকে নজর

সচিবালয়ের ভেতরে বর্তমানে অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক দপ্তরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, আইনটি কার্যকর রাখার ক্ষেত্রে সরকারকে এখন দুই ফ্রন্টে কাজ করতে হবে—একদিকে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষা, অন্যদিকে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা অর্জন।

উপসংহার

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নিয়ে ইতোমধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা সরকার কীভাবে মোকাবিলা করে এবং এর প্রয়োগ কতটা স্বচ্ছ ও যুক্তিযুক্ত হয়, তা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হয়ে দাঁড়াবে। সরকারি চাকরিজীবীদের দাবি ও অধিকার, প্রশাসনিক নীতিমালা এবং গণতান্ত্রিক আচরণের মাঝে একটি ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া এখন সময়ের দাবি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন