শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে জনগণ: তারেক রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের জনগণ ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি জাতীয় নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবে।

রোববার (২৫ মে) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-এর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যাশা জানান।

তারেক রহমান বলেন, “জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে জনগণ প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ ও নিরপেক্ষ নেতৃত্বে দ্রুত কার্যকর সংস্কার ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ।”

বাজেটের প্রাক্কালে এনবিআর সংস্কারে উদ্বেগ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “বাজেট পাসের ঠিক পূর্বমুহূর্তে এনবিআরের ওপর হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অনুকূল নয়।”

তিনি বলেন, “যেহেতু অন্তবর্তীকালীন সরকার সরাসরি জবাবদিহির আওতায় নয়, সেহেতু তাদের নেওয়া অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা যথাযথভাবে জনসম্মুখে উপস্থাপন করা উচিত। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্ধকারে রেখে নেওয়া সিদ্ধান্ত কখনো কার্যকর হতে পারে না।”

সুশাসনের অভাব ও বিনিয়োগ স্থবিরতা

বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, “দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে এবং দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে গভীর অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমরা লক্ষ করছি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নামছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের কথা শোনার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।”

স্বৈরাচার পুনরুত্থানের আশঙ্কা

তারেক রহমান সতর্ক করে বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দায়িত্বশীলতার অভাবকে পুঁজি করে দেশে পরাজিত স্বৈরাচারী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। গণতন্ত্রকামী জনগণকে এজন্য সতর্ক থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে সরকার যে চরিত্রই ধারণ করুক না কেন, সেটি ধীরে ধীরে স্বৈরাচারে রূপ নিতে বাধ্য হয়।”

গঠনমূলক সমালোচনার ওপর গুরুত্ব

তারেক রহমান বলেন, “সরকারি হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করেও নাগরিকদের উচিত সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা অব্যাহত রাখা। কারণ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, করুণাপ্রাপ্ত নয়। সরকারকে জনগণের ন্যায্য দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।”

তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতাদর্শগত ও প্রক্রিয়াগত পার্থক্য রয়েছে, তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। ৫ আগস্টের মতো গণজাগরণই প্রমাণ করে, জনগণ স্বৈরাচার প্রতিরোধে প্রস্তুত।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি

এনপিপি সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহদী আমিন, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী এবং সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা দেশে একটি জবাবদিহিমূলক নির্বাচনী পরিবেশ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন