বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামেই নারীর প্রকৃত নিরাপত্তা: বৈশ্বিক সংকটে একমাত্র কার্যকর ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা

বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় নারীর নিরাপত্তা এক গুরুতর সামাজিক ও মানবিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। নারীর স্বাধীনতা, অধিকার ও ক্ষমতায়নের নামে নানা ধরণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবতা হলো—নারী এখনো প্রতিদিন বৈষম্য, সহিংসতা ও অবমাননার শিকার। এমন বাস্তবতায় ইসলামী জীবনব্যবস্থাই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করতে সক্ষম, যা শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বাস্তবতার নিরিখেও এখন সত্যে পরিণত হয়েছে।

পশ্চিমা সমাজে নারী অধিকারের মুখোশে নিরাপত্তাহীনতা

আধুনিক পশ্চিমা বিশ্ব নারী স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইউরোপ-আমেরিকায় নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও #MeToo আন্দোলন থেকে শুরু করে হাজারো মামলা প্রমাণ করে নারীরা যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ফান্ডামেন্টাল রাইটস এজেন্সি (FRA) এর এক জরিপ অনুসারে, ইউরোপে প্রতি তিন জন নারীর একজন জীবদ্দশায় যৌন সহিংসতার শিকার হন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন (RAINN রিপোর্ট, ২০২৪)। OnlyFans, পর্নো ইন্ডাস্ট্রি এবং ভোগবাদী ফ্যাশন বাজার নারীর শরীরকে ভোগ্যপণ্যে রূপান্তর করেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নারীর মানবিক মর্যাদা হরণ করছে প্রতিনিয়ত।

দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক কাঠামোতেও নারী নিরাপত্তাহীন

ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান—এই উপমহাদেশে প্রতিদিনের সংবাদে নারীর ওপর সহিংসতা, এসিড হামলা, গণধর্ষণ, শিশু বিবাহ, যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক নির্যাতনের সংবাদ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতে ২০২৩ সালের জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ৯০টির বেশি ধর্ষণ হয়। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে নারী নির্যাতনের মামলা ২৫ হাজারের বেশি হয়েছে, যার একটি বড় অংশ ছিল পারিবারিক সহিংসতা ও দাম্পত্য নির্যাতন। পাকিস্তানে ‘কারোণী কিলিং’ বা সম্মান রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড আজও বিদ্যমান। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, কেবল আইন করলেই নারী নিরাপদ হয় না, বরং প্রয়োজন নৈতিকতা ও সুষ্ঠু সামাজিক কাঠামো।

ইসলামে নারীর মর্যাদার মৌলিক ভিত্তি

ইসলাম নারীকে কেবল সম্মানিত করেছে তা-ই নয়, বরং তার নিরাপত্তা, অধিকার ও ব্যক্তিত্বের উন্নয়নে একটি পরিপূর্ণ কাঠামো গড়ে দিয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে:
“হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা হুজুরাত: ১৩)

এটি পরিষ্কারভাবে নারীর সৃষ্টিগত মর্যাদা ও সামাজিক সমানাধিকারের ভিত্তি তুলে ধরে। এখানে নারী পুরুষের নিচে নয়, বরং তাদের একে অপরের জন্য পরিপূরক ও সম্মানজনক সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

নৈতিক নিরাপত্তা: পর্দা ও দৃষ্টিনিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য

ইসলামে পর্দার বিধান শুধু নারীর জন্য নয়, বরং পুরুষের দৃষ্টিনিয়ন্ত্রণই আগে নির্দেশিত হয়েছে:

“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করে…” (সূরা নূর: ৩০)

এই নির্দেশনার মাধ্যমে ইসলাম নারীর শালীনতা রক্ষা করে তাকে অপমান, অশালীন মন্তব্য ও দৃষ্টিগত নিপীড়নের হাত থেকে মুক্ত রাখে। এটি শুধু নারী নয়, সমাজের সার্বিক চারিত্রিক উন্নয়নের অংশ।

আইনি নিরাপত্তা: ধর্ষণ ও অপবাদে কঠোর শাস্তি

ইসলামে নারীর সম্মানহানি প্রতিরোধে রয়েছে শক্তিশালী আইন। ধর্ষণের প্রমাণ হলে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে—প্রকাশ্য দণ্ডেরও অনুমান রয়েছে। অপবাদ দিলেও চারজন সাক্ষী ছাড়া তা প্রমাণযোগ্য নয়, বরং মিথ্যা অপবাদ দাতার জন্য রয়েছে ৮০ বেত্রাঘাতের বিধান।

অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বাতন্ত্র্য: নারীর উপার্জন তার একক সম্পত্তি

ইসলামে নারীর উপার্জন, মোহরানা ও উত্তরাধিকার সম্পূর্ণ তার একক অধিকার। পুরুষের দায়িত্ব হলো নারীর ভরণপোষণ। এতে নারী অর্থনৈতিক চাপে নয়, বরং সম্মান ও নিরাপত্তার মধ্যে জীবনযাপন করতে পারে।

একজন নারী ব্যবসা করতে পারেন, সম্পদ রাখতে পারেন, এমনকি খরচেও তিনি স্বাধীন। ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার এই কাঠামো আধুনিক সমাজের জন্য একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

পারিবারিক মর্যাদা ও নারীর সত্তা: মা, কন্যা, স্ত্রী ও বোনের ভূমিকা

নারী ইসলামে কেবল একটি সামাজিক সত্তা নয়, বরং পরিবার ও জাতির ভিত। রাসূল (সা.) বলেন,
“জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে।” (নাসাঈ)

এই হাদীস মায়ের মর্যাদা বুঝাতে যথেষ্ট। কন্যা সন্তানের যথাযথ লালন-পালনকারী পিতার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ ঘোষণা করা হয়েছে। স্ত্রীকে ‘লিবাস’ (পোশাক) বলে উল্লেখ করে কুরআন এই সম্পর্কের আত্মিক ও নিরাপত্তার দিকটি তুলে ধরেছে (সূরা বাকারা: ১৮৭)।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ: আধুনিকতা বনাম ইসলাম

দিকসমূহআধুনিক বিশ্বইসলাম
নারী উপস্থাপনদেহপণ্য, বিজ্ঞাপন ও বিনোদনে ব্যবহৃতমর্যাদাপূর্ণ সত্তা, দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতীক
পোশাক ও আচরণউন্মুক্ততা, ব্যক্তিগত পছন্দের নামান্তরে বস্তুকরণশালীনতা, নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষামূলক নীতি
নিরাপত্তা ব্যবস্থাআইনগত, কিন্তু দুর্বল বাস্তবায়ননৈতিকতা + আইন + সামাজিক কাঠামোর সমন্বয়
অর্থনৈতিক নিরাপত্তাউপার্জনসহ দায় নারীর কাঁধেউপার্জনের অধিকার + ভরণপোষণের দায় পুরুষের
পরিবারে ভূমিকাপেশাদারিত্বের নামে পারিবারিক ভারসাম্য নষ্টমমত্ববোধ ও পারস্পরিক সহমর্মিতার ভিত্তিতে ভারসাম্য

উপসংহার: ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা যা নারীর প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে

আজ যখন তথাকথিত ‘মুক্ত সমাজ’ নারীর দেহকে পণ্যে রূপান্তর করেছে, তখন ইসলাম নারীকে দিয়েছে পূর্ণ মর্যাদা, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক নিরাপত্তা। শুধু ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং এটি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যান দ্বারা প্রমাণিত যে ইসলাম নারীর জন্য সর্বোত্তম জীবনব্যবস্থা।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন