শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সেনানিবাসে আশ্রয়গ্রহণ: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সেনাবাহিনীর মানবিক পদক্ষেপ

ঢাকা, ২২ মে ২০২৫ (বৃহস্পতিবার):
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর সৃষ্ট আইনশৃঙ্খলার সংকটকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, চুরি, অগ্নিসংযোগ ও মব জাস্টিসের মতো ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়ে সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস বিশেষ করে ঢাকায়, প্রাণ রক্ষার্থে বহু মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতির তাৎক্ষণিকতা বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দেয়। আইএসপিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, মোট ৬২৬ জন ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সাময়িকভাবে সেনানিবাসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ছিলেন:

  • ২৪ জন রাজনৈতিক নেতা
  • ৫ জন বিচারক
  • ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা
  • ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য
  • ১২ জন অন্যান্য শ্রেণিপেশার মানুষ
  • ৫১ জন স্ত্রী ও শিশু

এই আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে প্রাণ রক্ষা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা প্রদান। অধিকাংশ আশ্রয়প্রার্থী ১ থেকে ২ দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন। অপরদিকে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ ছিল, সেই ৫ জনকে আইন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এই বিষয়ে গত বছরের ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আইএসপিআর একটি আনুষ্ঠানিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ১৯৩ জন আশ্রয়প্রার্থীর নামের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে, যা তৎকালীন পরিস্থিতির আলোকে মীমাংসিত বিষয় বলে গণ্য করা হয়।

তবে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। সেনাবাহিনী এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং উল্লেখ করেছে যে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জাতির পাশে থাকার অঙ্গীকারে তারা সর্বদা অটল।

এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে সেনানিবাসে আশ্রয়গ্রহণকারী সম্পূর্ণ ৬২৬ জনের তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৩২ জন পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য অন্তর্ভুক্ত।

শেষ কথায়, মানবিক সংকটকালে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা ছিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটি জরুরি ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ, যা কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নয় বরং ছিল মানবিকতার প্রতিচ্ছবি।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন