শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ছুটি ছাড়া অনুপস্থিতি ও সমাবেশে যোগ দিলে শাস্তির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন

সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বিধান যুক্ত করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা বা সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণের মতো কর্মকাণ্ডে সরকার চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত পর্যন্ত করতে পারবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

চারটি অপরাধ ও কঠোর শাস্তির বিধান

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উপস্থাপিত খসড়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের চারটি আচরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—

১. এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া, যা অন্যদের মধ্যে অনানুগত্য বা শৃঙ্খলাবিরোধী মনোভাব তৈরি করে।

২. এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে ছুটি ছাড়া বা যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে কর্ম থেকে বিরত থাকা।

৩. অন্যদের দায়িত্বে অবহেলা বা অনুপস্থিতির জন্য প্ররোচিত করা বা উসকানি দেওয়া।

৪. কোনো কর্মচারীর দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে “অসদাচরণ”-এর দায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকছে। সম্ভাব্য শাস্তির মধ্যে রয়েছে:

  • পদাবনমন বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমন
  • চাকরি থেকে অপসারণ
  • সম্পূর্ণ বরখাস্ত

এই অধ্যাদেশ মূলত ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের সংশোধনী। জানা গেছে, ১৯৭৯ সালের পুরনো বিধি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু বিষয় পুনর্গঠন করে এই সংশোধনী তৈরি করা হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নযোগ্য কি না, তা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো দফাওয়ারি মতামত দেবে। এই সুপারিশগুলোর সম্ভাব্য বাস্তবায়ন সময়সীমা ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে উপদেষ্টা পরিষদ। সমন্বয়ের দায়িত্ব থাকবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওপর।

শহিদ পরিবার পুনর্বাসন ও অন্যান্য অধ্যাদেশ

বৈঠকে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের খসড়াও অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’
  • ‘প্রোটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’
  • বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস সরকারের মধ্যে নৌ-প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব
  • মৎস্য সংরক্ষণ বিষয়ক পৃথক একটি অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং কাঠামোগত সংস্কারে এই পদক্ষেপগুলোকে সরকার একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে।

বিজ্ঞাপন


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন